Logo
Logo
×

জাতীয়

‘ক্ষমতা ধরে রাখতে চার শহিদ পরিবারকে ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম

‘ক্ষমতা ধরে রাখতে চার শহিদ পরিবারকে ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা’

ছবি: যুগান্তর

দলে নিজের একচ্ছন্ন ক্ষমতা ধরে রাখতে জাতীয় চার নেতা ও তাদের পরিবারকে ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা- এমনটাই দাবি করেছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।

সম্প্রতি যুগান্তর মাল্টিমিডিয়ায় দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন হাসান সাইদুল।

সোহেল তাজ বলেছেন, শেখ পরিবারের প্রয়োজন আওয়ামী লীগের মধ্যে ইউনিটি দেখানোর। আর আওয়ামী লীগের মূল ইউনিটি হচ্ছে জাতীয় চার নেতার পরিবার। কেননা, এটা বিশাল প্রভাব ফেলে আওয়ামী লীগের ওপর। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা জানে শেখ মুজিব এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটা বিভেদ আছে। কিন্তু এই দুই গোষ্ঠী এক থাকলে দলটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যার জন্য নানাভাবে জাতীয় চার নেতা ও পরিবারকে খুব কাছের এমন একটি ব্যাপার দেখানো হয়েছে। কিন্তু নাসিম ভাই বা আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলে থাকেন তারা অন্য চিত্র দেখেছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এই পরিবারগুলোকে ব্যবহার করেছে শেখ হাসিনা।

ওই সাক্ষাৎকারে সোহেল তাজ পিলখানা বিডিআর হত্যাকাণ্ড, তদন্ত ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিজের দায় ও দায়িত্ব নিয়েও কথা বলেছেন।

পিলখানায় সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোহেল তাজ বলেছেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড একটি বিশাল ঘটনা। সেখানে ৫৭ জন তুখোড় আর্মি অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কার লাভ কার ক্ষতি এগুলো আমাদেরকে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

সোহেল তাজ বলেন, পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার অফিসারদের মধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেককেই চিনতাম। তখনকার সময়ের বিডিআর-এর ডিজি জেনারেল শাকিলের সঙ্গে প্রায়ই আমার কথা হতো। ওনার আমন্ত্রণে আমি পিলখানায় গিয়ে বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোহেল তাজ আরও বলেন, আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আইজিকে ফোন করেছিলাম। তাকে বলছিলাম, ওই জায়গাটা যেন র্যাব, পুলিশ, আনসার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। কিন্তু উনি তখন আমাকে বলেছিলেন এখানে তো মন্ত্রী মহোদয় আছে। তার মানে তিনি আবার নির্দেশ নিতে পারছেন না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকেও এই একই বিষয়ে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বলেছিলেন, এই বিষয়টা প্রধানমন্ত্রী দেখছেন। তারপর আমি প্রধানমন্ত্রীকেও ফোন করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, বিদেশে বসে বেশি বোঝো না।

সোহেল তাজ বলেন, এ রকম ঘটনা ঘটলে সর্বপ্রথম আক্রান্ত জায়গাটা ঘেরাও করে ফেলতে হয়। যাতে করে ভেতরে যারা ঘাতক আছে তারা যেন বুঝতে পারে তাদের কোনো পালাবার রাস্তা নাই। তারা যদি জানে পালাবার কোনো পথ নেই তাহলে হয়ত তারা এই হত্যাযজ্ঞগুলো নাও করতে পারতো।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে সোহেল তাজ বলেন, আমি দেশে এসেছিলাম ১০ মার্চ। ১১ তারিখ আমাদেরকে বলা হলো বিডিআরের এ ঘটনার সব তদন্ত কর্মকাণ্ড একটি কো-অর্ডিনেটিং কমিটি দেখবে। আর এই কমিটির মূল ব্যক্তি হলেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। এরপরই এ ঘটনার সব ফাইল এবং কার্যক্রম আমাদের হাত থেকে চলে গেল। শুধু তাই নয়, বিডিআর সম্পর্কেও আমাদের কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। আমরা কিছু জানি কিনা সেই সম্পর্কেও কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। যার ফলে এসব কর্মকাণ্ডগুলো আমার কাছে অদ্ভুত লাগে ছিল। কেননা, এগুলো তো এমন হওয়ার কথা না।

তিনি বলেন, এই ৫৭ জন অফিসার ওয়ান-ইলেভেনের সময় কিন্তু সক্রিয় ছিল। তারা সে সময় চেষ্টা করেছিলেন দেশটা রিফর্ম করার জন্য। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অফিসারও ছিলেন যারা সে সময় খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। কিন্তু এটা অনেকেই ভালোভাবে নেননি।

সোহেল তাজ বলেন, আমি চেয়েছিলাম এ ঘটনার একটা সঠিক তদন্ত হোক। কিন্তু কো-অর্ডিনেট কমিটি গঠনের ২ মাস পর তো আমি পদত্যাগই করেছি। তারপর কী হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কারণ পদত্যাগের পর আমি আমেরিকাতে চলে যাই।

পদত্যাগের বিষয়ে সোহেল তাজ বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে সরকার থেকে একটুও সহযোগিতা করা হয়নি। এরকম একটা পরিস্থিতিতে তো আর মন্ত্রিত্ব ধরে রাখা যায় না। আমি যদি টাকা বানাতে ওই চেয়ার বসতাম আর অন্যদের মত প্রতিবাদ না করে চালিয়ে নিতাম তাহলে কিছুই হতো না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম