টুঙ্গিপাড়ায় হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিদের অব্যাহতির দাবি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম

২০০১ সালে টুঙ্গিপাড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্বজনরা।
সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ওই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা আমিরুল ইসলামের ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম, মাওলানা শেখ ফরিদের পরিবারের শহিদুল ইসলাম, মাওলানা রফিকুল ইসলামের ছেলে আহমদ উল্লাহ, শাহানেওয়াজের শ্যালক সাব্বির আহমেদ, আব্দুল ওয়াদুদের বোন জায়েদা, শেখ ফরিদের ছেলে মুফতি শাফায়েত কাসেমী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করে বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পরিবারের নিরাপত্তা আইন পাশ করার জন্য ওই আলেমদেরকে মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা আমিরুল ইসলামের ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০০০ সালে খুনি হাসিনা তার পরিবারের আজীবন নিরাপত্তা বিল পাশ করার জন্য কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা মামলার নাটক সাজায়। তাছাড়া আরও অনেক জঙ্গি নাটক সাজিয়ে পাইকারী হারে দেশের বড় বড় আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদদেরকে আসামি করে জেলখানায় পাঠায়। তাদেরকে বন্দি করার কারণ, তারা ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে। জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলে। এসব বোমার নাটক সাজিয়ে নিজ পরিবারের আজীবন নিরাপত্তা বিল পাশ করে ও বিদেশী প্রভুদের খুশি করার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার আব্বা ৭০ বছর বয়সি একজন আলেম। তিনি একজন পীর, ইসলামিক লেখক, সাহিত্যিক ও গবেষক। আঁধার রাতের বন্দিনীসহ ২৫/৩০টি ইসলামিক বই লিখেছেন তিনি। লেখালেখি, তালিম, তাজকিয়া নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকতেন। খুনি হাসিনা কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমার নাটক সাজিয়ে মামলা করে। এতে আব্বুসহ দেশবরণ্য বহু আলেমকে আসামি করে বন্দি করে রেখেছে। আমার বাবাসহ অনেক আলেম দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ জুলুমের শিকার, তাদের নির্যাতনের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ।
৭৬ কেজি বোমার ঘটনা সম্পূর্ণ একটি সাজানো নাটক দাবি করে মুজাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, এ বোমা উদ্ধারের নামে কল্পকাহিনি তৈরি করে ৩টি মামলা দায়ের করেছে। যে বোমার না বিস্ফোরণ হলো, না সেখানে কেউ হতাহত হলো। এ রকম একটা বানোয়াট ঘটনায় কাউকে ২০ বছর, কাউকে ২৫ বছর যাবত কারাগারে শিকলবন্দি করে রেখেছে। মহামান্য হাইকোর্ট বলেছে, এ ঘটনার পুনঃতদন্ত করা হোক, আসলে কারা জড়িত তাদের বের করা হোক। সেখানে আল্লাহ রহম করেছেন। ন্যায় বিচার পাওয়া গেছে। কিন্তু অন্য যে মামলাগুলো রয়েছে, সব নিরপরাধ মজলুম উলামায়ে কিরামদের আটকে রাখা হয়েছে। আইনী জটিলতায় মামলার শুনানি হচ্ছে না, আমরা রায়ও পাচ্ছি না। এমনকি মামলাগুলো রায়ের পর দীর্ঘ ৩ বছর ১১ মাস ২৪ দিনের মধ্যে একবারের জন্যও কোর্টে ওঠেনি। আমরা কোনো আইনি সহায়তা পাইনি।
তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলার ঘটনা আপনারা দেখেছেন। সেখানে গ্রেনেড বিস্ফোরণ হলো, ২৪ জন মানুষ নিহত হলো, ৩শর অধিক মানুষ আহত হলো। মহামান্য হাইকোর্ট সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
এসব মিথ্যা মামলা থেকে সমস্ত আলেম উলামাকে মুক্তি দিয়ে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে ৩টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই মামলায় ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। পরে উচ্চ আদালত ওই রায় বহাল রাখে। ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদেরকে হরকতুল জিহাদের (হুজি) নেতাকর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যে মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।