
প্রিন্ট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩২ এএম
দেশ অস্থিতিশীল করার নেপথ্যে যারা
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫৯ এএম

আরও পড়ুন
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ছোট-বড় যে কোনো ইস্যুতেই সড়ক অবরোধসহ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন খাতসংশ্লিষ্টরা। একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে সরকারের ওপর। একটি সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই আরেকটি এসে ধাক্কা দিচ্ছে। আর এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতাদের দেওয়া বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, যা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন তারা।
এমনকি আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে হরতাল, মশাল মিছিল, লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচিও দেওয়া হয়। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করতে উসকে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। তারা জানান, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও জড়িত আছেন সাবেক বেশ কয়েকজন প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ আমলার নাম চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৭ মাস পূর্ণ হচ্ছে। এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এখানেই শেষ নয়, ঈদ সামনে রেখে গার্মেন্ট সেক্টরে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে ইস্যু করা হবে, যা বিচ্ছিন্নভাবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক স্থানে সংঘটিত হয়েছে। অস্থিতিশীল করার জন্য তৈরি হয়েছে ‘ভায়োলেন্স ক্রিয়েটার গ্রুপ।’ টাকার বিনিময়ে অবরোধ, মিছিল, জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন সংঘবদ্ধ অপরাধের প্রস্তুতি নিয়েছে গ্রুপটি। শ্রমিকদের মনে ভীতির সঞ্চার করে কাজের স্বাভাবিকভাবে গতি ব্যাহত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা উত্তপ্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পতনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরই অংশ হিসাবে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ডাকাতি ও ছিনতাই আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ানো হয় পরিকল্পিতভাবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিওবার্তায় পরিকল্পনার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এর পরপরই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান ঘোষণা করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর হুঁশিয়ারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় আগের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের কাছে অনেক টাকা আছে। টাকা খরচ করে সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে তারা পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা তৎপর আছি। আশা করছি তারা সফল হতে পারবে না।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পলাতক থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অনেক রাজনৈতিক নেতা এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি কিছু আমলার তালিকাও এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-ধনঞ্জয় কুমার দাস, শেখ ছালে আহম্মদ, নাসরিন পারভীন, বিকাশ বিশ্বাস, আমিনুল ইসলাম, সেখ ফরিদ আহমেদ, শরিফা আহমেদ, ড. ফারুক আহম্মদ, আবু সাঈদ মোল্লাহ, কানিজ ফাতেমা, ফারজানা সিদ্দীকা, তাহনিয়া রহমান চৌধুরী, আমিন আল পারভেজ, আশরাফ আহমেদ রাসেল, শহীদ উল্লাহ প্রমুখ।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম শুক্রবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, আপনারা ধরেই নিতে পারেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ পতিত সরকারের অনেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। যারা বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশকে অশান্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া চলমান। আর যারা দেশে অবস্থান করে পলাতক শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী যুগান্তরকে জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মাধ্যমে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছিল। তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। অপশক্তিকে রুখতে ‘ডেভিল হান্ট অপারেশন’সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বতর্মান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ষড়যন্ত্র শুরু হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে না নিতেই রাজারবাগে নানা দাবি তুলে বিদ্রোহ শুরু করেন অধস্তন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এর নেপথ্যে ছিলেন আওয়ামী আমলের উচ্চাভিলাষী পুলিশ কর্মকর্তারা। আর সামনে ছিলেন এক কনস্টেবল এবং এক এএসআই। রাজারবাগ বিদ্রোহ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আনসার বিদ্রোহ। আনসার সদস্যরা বেআইনিভাবে সমাবেশ করেন। নতুন সরকারকে বিপদে ফেলতে ঘোরও করেন সচিবালয়। বাধা দেন পুলিশের কাজে। একপর্যায়ে তারা ঢুকে পড়েন সচিবালয়ের ভেতর। এসব ঘটনায় কিছু আনসার সদস্য সামনে থাকলেও পেছনে ছিল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশে দলীয় অনেকেই আনসারের পোশাক পরে আন্দোলনে নামেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।