গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সেবা গবেষণায় সাফল্য দেখাচ্ছে গ্রুপ কেয়ার মডেল

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৮ এএম

দেশে প্রথমবারে মা হওয়া অল্প বয়সী নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাফল্য দেখিয়েছে ‘গ্রুপ কেয়ার মডেল’ (প্রসূতির দলগত স্বাস্থ্যসেবা)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাতৃস্বাস্থ্য সেবার প্রথম ধাপ এন্টিনেটাল কেয়ার (এএনসি) অর্থাৎ একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর সন্তান জন্মদানের পূর্বপ্রস্তুতি থেকে শুরু গর্ভকালীন সেবা পাওয়া। একই সঙ্গে পোস্ট নেটাল কেয়ার (পিএনসি) তথা প্রসব-পরবর্তী সেবা। এএনসি এবং পিএনসি সেবায় গ্রুপ কেয়ার মডেল মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সভায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা ‘সুস্থ মা, সুস্থ পরিবার’ প্রকল্পের গবেষণা ফলাফল তুলে ধরার সময় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শেখ সায়েদুল হক। গবেষণা পত্র উপস্থাপন করেন ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস ফর হেলথ প্রকল্প পরিচালক ডা. ফারজানা ইসলাম।
সভায় জানানো হয়, প্রচলিত গর্ভকালীন সেবায় অনেক সময় প্রথমবার মা হওয়া অল্প বয়সী নারীদের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য, সামাজিক ও মানসিক তথ্য প্রদান করতে পারে না। এমন বাস্তবতায় গত চার বছর ধরে ঢাকার অদূরে টঙ্গী এলাকায় ‘সুস্থ্য মা, সুস্থ্য পরিবার’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গর্ভকালীন নারীদের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস ফর হেলথ, ব্র্যাক, স্কোপ এবং পপুলেশন কাউন্সিল যৌথভাবে এটি পরিচালনা করে।
গবেষণায় দেখা যায়, গ্রুপ কেয়ার শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল চেকআপ নয় বরং পিয়ার লারনিং ও সামাজিক সহায়তার মাধ্যমে সেবার মান উন্নয়ন করে থাকে। যা প্রথমবার মা হওয়া অল্প বয়সী নারীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, মানসিক শক্তি এবং সম্মানজনক সেবা পাওয়ার পরিবেশ তৈরীতে সহায়তা দেয়। এছাড়া প্রথমবার হতে যাওয়া বাবাদেরও মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সর্ম্পকে পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পরামর্শ দেয়।
গবেষণা ফলাফলে জানানো হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসময় ৬ হাজার ১১৮ জন প্রথমবার মা হওয়া নারী ৯৮৯টি এএনসি গ্রুপ সেশনে এবং ৪৫২টি পিএনসি গ্রুপ সেশনে অংশ নেন। এভাবে গর্ভকালীন সেবা গ্রহনের হার এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় প্রথমবার মা হওয়া ৭৫ শতাংশ নারী অন্তত চারটি এএনসি সেবা গ্রহণ করেছে। যেখানে সরকারের জনমিতি ও জনস্বাস্থ্য জরিপে (বিডিএইচএস) ৫৫ শতাংশ। এছাড়া ৮০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নারী হাসপাতালের ডেলিভারি করেছে। সেখানে বিডিএইচএ (২০২২ সাল) এ শহরাঞ্চলে ৭৬ শতাংশ ছিলো। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ভাবে সন্তান প্রসবের হার বেড়েছে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রকল্পে ৫ হাজার ৩০০ বারের বেশি পুরুষদের অংশগ্রহণের রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া প্রসব-পরবর্তী জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ মা তাদের শিশুদের শুধুমাত্র ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ পান করিয়েছেন, যেখানে নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এই হার ছিল ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ। একইভাবে প্রথমবার মা হওয়া নারীদের কমপক্ষে তিনটি গর্ভকালীন বিপদের লক্ষণ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রসবের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ শতাংশ।
ডা. ফারজানা ইসলাম প্রকল্প গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনায় বলেন, গর্ভকালীন সময়টি প্রথমবার মা হওয়া অল্প বয়সী নারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রকল্পটি পরীক্ষা করেছে কিভাবে গ্রুপ সেশন সেবা গ্রহনের হার, স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে। বাংলাদেশে গ্রুপ কেয়ার মডেলটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই গ্রুপ কেয়ার মডেলটি স্থিতিশীল এবং সম্প্রসারণ করতে সরকারী প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিনিয়োগ ও আরও গবেষণা দরকার।