‘শুধু আইন মানা নয়, জীবন রক্ষার জন্য দরকার হেলমেট’

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম

শুধু আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়, জীবন রক্ষার উপকরণ হিসেবে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীকে হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে মানসম্পন্ন হেলমেটের ব্যবহার বাড়াতে সরবরাহ এবং দাম সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের সমাধান সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে করতে হবে। তেমনি দাম ও মানের বিষয়েও সমন্বিত কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
রোববার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ক্রিস্টাল বলরুমে ‘স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট অ্যাডভোকেসি ইভেন্টে’ বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বিশেষ অতিথ হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, বিএসটিআই’র মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. গেইল মার্টিন উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্র্যাকটিস ম্যানেজার (ট্রান্সপোর্ট) ফেই ডেং অনলাইনে স্বাগত বক্তব্য দেন। বিশ্বব্যাংক, ব্র্যাক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।
এতে স্বাগত বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের ফেই ডেং বলেন, মোটরসাইকেল চালকরা সড়কে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় গুরুতর মাথার আঘাতের আশঙ্কা ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম।
প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনারোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে চালকদের প্রশিক্ষণ, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণ ও চিহ্ন স্থাপন, পথচারীদের নিরাপত্তা জোরদার ও গতি পর্যবেক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ডোপ টেস্টিং বাস্তবায়ন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত এবং অ্যাম্বুলেন্সের রাখতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত স্ট্যান্ডার্ড হেলমেটের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে আমদানি করা হেলমেটের মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। সহজেই মানসম্পন্ন ও আন্তর্জাতিকভাবে সনদপ্রাপ্ত হেলমেট চেনার জন্য সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াকে সহজ করতে হবে।
সেইসঙ্গে তিনি আইন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরেন।
বিএসটিআই’র মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, হেলমেট তৈরির প্রতিটি উপাদান জীবন সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএসটিআই উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি হেলমেটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মানদণ্ড নিশ্চিত করে থাকে।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, সড়ক নিরাপত্তা একটি সমন্বিত দায়িত্ব। পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফিট সড়কের মতো উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জন্য বিশেষ কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সড়কসহ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় সচেতনতা কার্যক্রমসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং তরুণ মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজনের কথা বলেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহার বাড়াতে সরবরাহ এবং দাম সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করতে হবে। হেলমেটের মান ও সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিতে সবাইকে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম অফিসার দিলশাদ দোসানী সড়ক নিরাপত্তাকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করে সড়ক নিরাপাত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য পরামর্শ তুলে ধরেন।
ব্র্যাকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের উদ্বেগজনক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও নাজুক করে তুলেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর উচ্চ পরিসংখ্যান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭০৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৩১.১৩ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে এই মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৬০৯ জন, যা দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫.৭৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৪৩.৪২ শতাংশ। দুর্ঘটনা রোধে বিদ্যমান আইনের দুর্বল বাস্তবায়নের ফলে নিম্নমানের হেলমেট বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে, যা লাখো চালক-আরোহীর জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন, বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল রোড সেফটি ফ্যাসিলিটির পরিবহণ বিশেষজ্ঞ আরিফ উদ্দিন, হেলমেট আমদানিকারকদের পক্ষে ভলকান লাইফস্টাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম সাফাত ইশতিয়াক উপস্থিত ছিলেন।