Logo
Logo
×

জাতীয়

উপদেষ্টা জীবনে বিশ্বাসে চিড় ধরেছে: আসিফ নজরুল

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ এএম

উপদেষ্টা জীবনে বিশ্বাসে চিড় ধরেছে: আসিফ নজরুল

ছবি: সংগৃহীত

লেখালেখি করার সময়গুলো বড্ড মিস করছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর সেই দিনের স্মৃতিচারণ এই দিনে করেছেন তিনি। ফেসবুকে লম্বা এক পোস্টে লিখেছেন, ‘উপদেষ্টা জীবনে আমার ঘুম হারাম হলো, মন বিমর্ষ হলো, মানুষের প্রতি বিশ্বাস কিছুটা হলেও চিড় ধরলো।’

নিজের প্রোফাইলে ২১ ফেব্রুয়ারিতে স্মৃতি রোমন্থন করেন ড. আসিফ নজরুল। তার সেই পোস্টটিতে ১৪ হাজারের ওপর লাইক পড়েছে। ২ হাজার তিনশ কমেন্ট ও একশটি শেয়ার হয়েছে।

আসিফ নজরুল পোস্টে লেখেন, 

গতবছর আমার জীবনে বিস্ময়কর একটা ঘটনা ঘটে। জানুয়ারির শেষদিকে আমার উপন্যাস ‘আমি আবুবকর’ প্রকাশিত হয়। এরপর শুধু একমাসে এটি দশ দশবার মুদ্রিত হয়। এই উপন্যাসটা অনেক সাহস করে লিখেছিলাম। জামাত-শিবির-রাজাকার ট্যাগ দিয়ে যে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, তা নিয়ে লেখা। 

তখনো শেখ হাসিনা দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ শাসন করছেন। তাছাড়া মাত্র কয়েকমাস আগে ছাত্রলীগ আমার অফিসরুমে তালা দিয়েছিল, হুমকি দিয়েছিল আরো হেনস্তা করার। ‘আমি আবুবকর’ বইমেলার আসার পর তাই আমাকে পরামর্শ দেয়া হলো সেখানে না যাওয়ার, বা গেলে সাবধানে থাকার। 

এসব অপমানজনক কথায় আমি ভয় পাই যতোটা, মন খারাপ হয় তারচেয়ে বেশি। তবু বইমেলায় প্রথমা-র ষ্টলে গেলাম। গিয়ে আমি আবুবকর কিনতে মানুষের ভীড় দেখে মন বরং উৎফুল্ল হয়ে গেলো। বইমেলা শেষ হওয়ার পর ভাবলাম এতো পাঠক বইটা কিনলো, রকমারির পেজ, ফেসবুক আর ফোনে ফোনে এতো প্রশংসা পেলাম, সামনের উপন্যাসটা আরো ভালো লিখতে হবে। ‘সেপিয়ান ভালোবাসা’ নামে উপন্যাসের একটা খসড়া ঈদসংখায় ছাপা হয়েছিল। ঠিক করলাম সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করে ফেলবো উপন্যাসটা, তারপর আরো কিছু লেখার পরিকল্পনা ছিল, সেটা করবো। 

সারাদিন মনে মনে সেই উপন্যাসটা লিখতে শুরু করলাম। কোন কোন জায়গা বড় করবো, নতুন চ্যাপ্টার কোথায় কোথায় হবে, কাহিনীর শেষটা কোথায় এসব ভেবে রাখলাম। এরপর জুলাই এলো, প্রবল উত্তাল জুলাই। কোথা থেকে উড়ে আর ভেসে আমি কোথায় চলে গেলাম! আমার লেখার কি-বোর্ড কোথায় তলিয়ে গেল। কোথায় হারালো মগ্নতার সময়!

উপদেষ্টা জীবনে আমার ঘুম হারাম হলো, মন বিমর্ষ হলো, মানুষের প্রতি বিশ্বাস কিছুটা হলেও চিড় ধরলো। এসব অবশ্য নতুন কিছু না। নতুন ও করুণ যা, আমার অনেক প্রিয় লেখক সত্তাটা আবারো অবরুদ্ধ হলো। 

প্রথম আলো-তে প্রকাশিত কলাম নিয়ে আগে বই করেছি, ভালো সাড়া পেয়েছি পাঠকের। এসব মনে করে সর্বশেষ কলামগুলো নিয়ে ক্লান্তমনে অবশেষে একটা বই করলাম। এই বইটার শুধু ভুমিকার ২টা পৃষ্ঠা নতুন করে লেখা। সংকলনের বাকি সব কাজ করে দিয়েছেন মশিউল আলম ভাই। বই বের হলো, প্রথমা থেকেই। সেপিয়ান ভালোবাসা না, মৌলিক কিছু না, তবু বই তো। ‘শেখ হাসিনার অন্তিমকাল’নামের এই বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু আমার বুকের হাহাকার দুর হয় না তাতে। 

পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্মল আনন্দ লেখালেখি করা, মনে মনে গল্প লেখা। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, মানুষের নড়তে থাকা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে, প্রবল কলরবের শহরের মাঝে থেকে গল্পের কথা ভাবা, এর গায়ে গায়ে লেগে থাকা বিষাদ আর বিস্ময়ের কথা ভাবা। জানি না, সেই দিন কবে আসবে আবার!

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম