
টানা চার বছর পালনের পর এবার পালিত হচ্ছে না জাতীয় বিমা দিবস। চার বছর ধরে প্রতি ১ মার্চ দিবসটি পালিত হচ্ছিল। তবে এ বছর জাতীয় বিমা দিবসের পাশাপাশি বিমা মেলাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র।
বিমা দিবস পালন না করার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সচিব নাজমা মোবারেক। তিনি বলেন, ‘এ বছর বিমা দিবস পালন হচ্ছে না।’ এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কোনো উদ্যোগ নেই। বিমা কোম্পানির মালিকরাও কিছু জানেন না। তবে কেন পালন করা হবে না, এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দিবসটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ কারণে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবার দিবসটি পালন করা হচ্ছে না। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগ দেন। ওই সময় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি। আর তারিখটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ১ মার্চকে ‘জাতীয় বিমা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। ওই সময়ে বিমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি ছিলেন শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন। এরপর টানা চার বছর ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে’ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষ্যে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং আইডিআরএ। দিবসটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমা কোম্পানিগুলোকেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো। কিন্তু এ বছর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিআইএ’র বর্তমান সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছর এফআইডি এ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন সেখানে সহায়তা করে। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত অফিশিয়ালি আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
জানা গেছে, দেশের বিমা খাতটি এখনো অভিশপ্ত। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরেনি। ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠিত হলেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রায় ৫০টি বিমা কোম্পানি অনুমোদন দিয়েছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিমা কোম্পানি অনুমোদন দেওয়ায় এ খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। বর্তমানে দেশে মোট বিমা কোম্পানির সংখ্যা ৮২টি। এর মধ্যে জীবন বিমা কোম্পানি আছে ৩৬টি। আর নন-লাইফ বা সাধারণ বিমা ৪৬টি। এর মধ্যে ৩১টি বিমা কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে দাবি পূরণ করতে পারছে না। এসব কোম্পানির কাছে ১১ লাখ গ্রাহকের ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। অন্তত ১০টি বিমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। তবে এসব কোম্পানির মালিকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ব্যাপক প্রভাব ছিল এই খাতে।