
হাসিনা রেজিমের পতনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশ-জাতির স্বার্থে সেরা কর্মসূচিটি নিয়েছিল তিস্তায়। এটা আমার নিজের মতামত। এখনকার পরিস্থিতিতে মোটামুটি একটা ভালো ভোট হলে বিএনপি অনেক বেশি আসন পেয়ে সরকার গড়বে বলেই আমার বদ্ধমূল ধারণা। এই অবস্থায় বিএনপি রোজই 'জলদি নির্বাচন চাই' বলে যে বক্তব্য দিচ্ছিল তাতে খানিকটা অস্থিরতা ও স্বার্থপরতার আভাস মেলে। এই দাবি যখন কিছুটা ক্লিশে ও বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে তখন বিএনপির তিস্তা কর্মসূচি খুবই 'প্র্যাগমেটিক' হয়েছে। জাতীয় স্বার্থের এই কর্মসূচি খুব জননন্দিত হয়েছে। এ উপলক্ষে তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ সব নেতার বক্তৃতাও খুব প্রশংসিত হয়েছে। সব দেখে শুনে আমারও মনে হচ্ছিল বিএনপি আবার সত্যিকারের বিএনপিতে ফিরে এসেছে।
এই কর্মসূচির সুফল বিএনপি ঘরে তোলার আগেই এবং কর্মসূচি চলাকালেই খুলনার কুয়েট-এ বিএনপির তরুণ-তুর্কিরা মানে ছাত্র ও যুবদল মিলে যে কাণ্ড করল তাতে তিস্তা কর্মসূচির সাফল্য পুরোই আড়াল হয়ে গেল। তিস্তার বদলে মিডিয়া জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করলো কুয়েটের ঘটনা। বিএনপির তিস্তা কর্মসূচিকে কেউ নিশ্চয়ই আড়াল করতে চায়। তারা মনেপ্রাণে চেয়েছে এমন কিছু একটা ঘটুক যাতে তিস্তা নিয়ে দাবি ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু তাদের সে চাওয়াটাকে বিএনপির ভেতর থেকে পূরণ করে দিতে হবে কেন?
কুয়েটে যে অবাঞ্ছিত মারামারি ও রক্তঝরার ঘটনা ঘটেছে এটার জন্য ছাত্রদল পুরো দায়ী বলে আমি মনে করিনা। একটি বড় ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নেয়াটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তাদের সে চেষ্টায় ছাত্রশিবির বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র যারাই গায়ের জোরে বাধা দিয়ে থাকুক, উস্কানিটা তাদেরই দেওয়া। কিন্তু ছাত্রদল সে উস্কানিতে পা দেবে কেন? তারা কি জানেনা, কোথাও কোনো সংঘর্ষে ছাত্রদল জড়িয়ে গেলে বড় সংগঠন হিসেবে দায়টা তাদের ঘাড়েই বর্তাবে?
সংঘর্ষ কখনও একপক্ষে হয় না। সংঘর্ষে যারা জড়ায় তারা সবাই কমবেশী দায়ী। কাজেই ছাত্রদলেরও দায় আছে। তাছাড়া তাদের পক্ষে বাইরে থেকে যুবদল এসে কেন জড়াবে? আর তাদের হাতে দেশি যে-সব অস্ত্রের ছবি প্রচারিত হয়েছে তা তো হাসিনা রেজিমে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্মৃতিই মনে করিয়ে দেয়। এই চিত্র খুব ক্ষতিকর হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে যুবদল ইতোমধ্যে একজনকে বহিষ্কার করেছে। এই দায় না নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ইমেজ কিছুটা হয়তো মেরামত হবে। তবে এখনো কেউ কেউ মেইনস্ট্রিম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কাণ্ডকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়েই চলেছেন।
সংগঠনের ইমেজের ক্ষতি ছাড়াও এর মাধ্যমে তিস্তা কর্মসূচির সুফলকে মাঠে মারা হয়েছে। যাদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তিস্তা কর্মসূচি, কুয়েটের ঘটনায় বুঝে কিংবা না বুঝে তাদের পারপাসই সার্ভ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। আমার শেষ কথা হচ্ছে, সামনে বিএনপি সহজেই ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু ক্ষমতায় যাবার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হবে রাষ্ট্রপরিচালনা। হাসিনার পতনের পর ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ। এ সংবেদনশীল সময়ে ছাত্রদলকে সংযত ও পেশীশক্তির প্রদর্শন থেকে খুব যত্ন করে বিরত থাকতে হবে। মাঠ দখলের চাইতে এখন বেশি জরুরি জনচিত্ত অধিকার করা।▪️
লেখক পরিচিতি : মারুফ কামাল খান : সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক।
ই-মেইল : mrfshl@gmail.com