ডিসি সম্মেলন শেষে সিইসি
স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক চলছে, আমরা অংশীদার হতে চাই না
# ডিসিদের ওপর অবৈধ কোনো চাপ দেবে না ইসি # ডিসিদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা রাজনৈতিক বিতর্ক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ওই বিতর্কে নির্বাচন কমিশন জড়াতে চায় না। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য ডিসিদের এখন থেকেই কাজ শুরু করা দরকার। নির্বাচনের সময় নিজ উদ্যোগে নিরপেক্ষভাবে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রথমবার অংশ নিলেন সিইসি, চার কমিশনার ও ইসির সিনিয়র সচিব। সেখানে নির্বাচন কমিশনাররা ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন জেলা প্রশাসকরা।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ডিসি সম্মেলনে কোনো আলোচনা হয়নি। ওনারা (ডিসিরা) কেউ আলোচনা তুলেননি, আমরাও তুলিনি। প্রয়োজনও মনে করিনি। ওনারা অ্যাওয়ার অব হোয়াট ইজ গোয়িং অন...। তবে এটা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, আপনারা দেখছেন। আমরা ওই বিতর্কের অংশীদার হতে চাই না। একটা ফয়সালা হোক, তারপর দেখা যাবে। প্রধান উপদেষ্টা (জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে) যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।
ডিসি সম্মেলনে ইসির নির্দেশনার বিষয়ে সিইসি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসি তাদের এ বার্তাটা দিতে চেয়েছে যে, সামনের নির্বাচনে তারা যেন নিজ উদ্যোগে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেন। ইসি তার নিজের আইনের সর্বো”চ প্রয়োগ করবে। তিনি বলেন, আমরা যেমন ইলেকশন কমিশন কাজ করছি ইলেকশন নিয়ে, আপনারাও সহযোদ্ধা। আমরা একটা যুদ্ধে নেমেছি। এটা হচ্ছে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার যুদ্ধ। আমি বলেছি, আপনারা আমাদের সহযোদ্ধা হিসাবে থাকবেন। এখন থেকেই কাজ শুরু করেন। ওনারা কথা দিয়েছেন, ওনারা সেভাবেই কাজ করবেন।’
ইসি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চায় উলেখ করে সিইসি জানান, অনুষ্ঠানে একজন নির্বাচন কমিশনার ডিসিদের উদ্দেশে নির্বাচনি আইন পড়ে শুনিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কী কী ক্ষমতা আছে, তা পড়ে শুনিয়েছেন। ইসি চায় কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনি অপরাধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা যার যার ভূমিকা ষোলো আনা যাতে পালন করেন, সে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে নির্বাচন ও ভোটাধিকার সম্পর্কে ডিসিদের বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান সিইসি। তিনি জানান, আমরা বলেছি, আপনারা নির্বাচনের দিন বা তার দু-চারদিন আগে পরে নয়, এখন থেকে ইলেকশনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান।
সিইসি বলেছেন, আগে ডিসিদের ওপর নানা চাপ এসেছে। ইসি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে, তাদের কোনো অবৈধ চাপ দেবে না। ওপর থেকে কোনো চাপ এলে সেটা ইসি ‘অ্যাবজর্ব’ করবে। ডিসিরা শুধু আইনি ক্ষমতা যেন প্রয়োগ করেন, সেটাই তারা চান। অতীতে এটা হয়নি।
এখন থেকেই সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরির (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) বিষয়ে ইসি কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন জানান, তারা ডিসিদের ভোটের দিনের জন্য বসে না থেকে এখন থেকেই শুরু করার বার্তা দিয়েছেন। ইসি বলেছে, ডিসিদের পুরোপুরি নিরপেক্ষ হতে হবে। তাদের যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে, সেটা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তারাও অঙ্গীকার করেছেন, সেটা তারা করবেন।
সিইসি জানান, বৈঠকে একজন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনে ইসিকে সহযোগিতা করতে ডিসিরা বাধ্য। এটা কোনো দয়া নয়, তারা দায়িত্ব পালনে আইন দ্বারা বাধ্য। আইন পড়ে শুনিয়েছেন। রিটার্নিং অফিসারের কী কী ক্ষমতা আছে, তাও শুনিয়েছেন। আমরা আইনের সর্বো”চ প্রয়োগ এবং ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশন দিতে চাই। জাতিকে ওয়াদা করেছি এই নতুন ইলেকশন কমিশন সে ওয়াদা পালন করতে চায়।