ডিসি সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা
জুলাই অধিদপ্তরের আত্মপ্রকাশ শিগগিরই

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে। অধিদপ্তরের নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত। খুব শিগগিরই অধিদপ্তরটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের ‘জুলাই শহিদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হবে। এদিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রমের মালামাল এখন থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হবে।
সোমবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের ‘জুলাই শহিদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হবে। সে অনুযায়ী সনদ, পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তিনি বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জুলাই যোদ্ধারা ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। যারা জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন তাদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে পাবেন।
এর মধ্যে এ অর্থবছরেই সঞ্চয়পত্রের অধীনে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। বাকি ২০ লাখ আগামী অর্থবছরে দেওয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের তিনটি ক্যাটাগরি করা হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘বি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা এককালীন ৩ লাখ টাকা ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। যারা আহত হয়েছিলেন তবে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে গেছেন, তারা সি-ক্যাটাগরির আহত (কম গুরুতর)। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি বা অন্য কিছুতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পাবেন। তবে তারা কোনো টাকা বা ভাতা পাবেন না। আর চাকরি কোনো কোটার ভিত্তিতে নয়, অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে পাবেন।
রাজনৈতিক সরকার যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে জুলাই অধিদপ্তরের অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে। এমন আশঙ্কা কি করেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা তো সরকারিভাবে এ জুলাই অধিদপ্তর করেছি। পরে রাজনৈতিক সরকার যারাই নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারা তো জুলাই অভুত্থানের চেতনা নিয়েই আসবেন। আমরা মনে করি তারাও রক্ষা করবেন। তারা দেশ-জাতিকে মুক্তির জন্য, বৈষম্যমুক্ত করতে জুলাই অভ্যুত্থানে ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
ফারুক-ই-আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহিদ তাদের তালিকা পেয়েছি জানুয়ারির ১৬ তারিখে। সেই রাত ২টায় আমরা গেজেট করে তা প্রকাশ করেছি। আহতদের তালিকাটাও তৈরি হচ্ছে খুব দ্রুত। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আহতদের তালিকা ক্যাটাগরি করা হচ্ছে। তালিকাটা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আসামাত্র তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব, গেজেট প্রকাশ করব। তাই এখানে নতুন করে ঢুকানো বা বাদ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
ফারুক-ই-আজম বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেলে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) পুনর্গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জেলায় জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হবে। সেখান থেকে চিহ্নিত করা হবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহতরা দাবি তুলেছেন ক্যাটাগরি তুলে দেওয়ার জন্য। সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ বা চিন্তা মন্ত্রণালয় করছে কি না জানতে চাইলে বলেন, না, এ রকম কোনো তথ্য নেই। সে রকম কোনো পরিকল্পনা আপাতত জানা নেই। তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করছে। তারা তাদের কাজ শেষ করে আমাদের জানালে আমরা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেব। শুরুর দিকে যারা আহত ছিলেন, আহত হয়ে, অসুস্থ হয়ে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের অনেকে ডকুমেন্টস রাখেননি বা সংগ্রহ করেননি। তাদেরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে উলেখ করেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের মালামাল এখন থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হবে। দ্রুত সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানো, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসিদের তত্ত্বাবধানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব মালামাল কিনবেন। প্রতি উপজেলায় এ খাতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে মালামাল কিনবেন। বর্তমানে ত্রাণসামগ্রী কেন্দ্রীয়ভাবে কেনা হয়। এতে একই জায়গা থেকে বারবার কেনা হচ্ছে।’
ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘স্থানীয় পুনর্বাসন, টিআর, কাবিখা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্প যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সেজন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এর মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।