বিআরটিএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১৬ পিএম

রাজধানী থেকে ২০ বছরের অধিক পুরোনো বাস তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে গণপরিবহণে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। ওই দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাছাড়া সিএনজি চালক-মালিকদের হাতে অসহায় যাত্রীদের তুলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, রাজধানীর সৌন্দর্যবর্ধন, পরিবেশ দূষণ রোধ, সড়ক দুর্ঘটনা ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকার ২০ বছরের পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস উচ্ছেদের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ উদ্যোগ ঠেকাতে ফিটনেসবিহীন পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলো রাতারাতি গোলাপি রং দিয়ে চালাতে গিয়ে নগরজুড়ে প্রতিদিন গণপরিবহণ সংকটে ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়ছেন প্রতিদিন নিয়মিত অফিসগামী যাত্রীরা। এমন সংকট নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগ ও সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। সংকট নিরসনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
মহাসচিব বলেন, পুরোনো বাস উচ্ছেদ করে মানসম্মত উন্নত গণপরিবহণ নামাতে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ঢাকার সব রুট বিলুপ্ত করে ৯টি রুটে ৯ কালারের উন্নত বাস পরিষেবা চালুর নির্দেশনা দেন। এমন নির্দেশনা অপব্যবহার করে নতুন উন্নত বাসের বদলে ২০ থেকে ৪০ বছর যাবত নগরীতে চলাচলরত মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন বাস রাতারাতি গোলাপি কালার ধারণ করে চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি বলেন, এসব বাস ইতোমধ্যে মুখ থুবড়ে পড়া, ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে বাস কাউন্টারে ভাড়ার টাকা আদায় করে চালক-সহকারীর দৈনিক হারে ট্রিপভিত্তিক মজুরি নির্ধারণ ও সাপ্তাহিক, পাক্ষিক হারে মালিকের জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাস মালিক সমিতি। এতে দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক চুক্তিতে চলা বাসগুলোর মালিকরা সমিতি থেকে সঠিক হিসাবে বাসগুলোর জমা টাকা পাওয়া নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তিতে চলা বাসের আয় থেকে কম মজুরি নির্ধারণ করায় চালক ও সহকারীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রান্তিক বিভিন্ন বাসের মালিক ও চালক-সহকারীরা তাদের কিছু কিছু বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে।
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, এসব বাস-মিনিবাসের সিংহভাগই ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড়, অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরা আবর্জনায় ভরপুর। উপরন্তু কোনো কোনো পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস উচ্ছেদ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে মালিক সমিতির পরিবর্তে একটি কোম্পানির আদলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে রুট রেশনালাইজেশন পদ্ধতিতে করিডরভিত্তিক চলাচল নিশ্চিত করে ৫,০০০ উন্নত মানের বাস নামানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব রোববার নগরজুড়ে সড়ক অবরোধ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের তাণ্ডবলীলায় ভয়াবহ যাত্রী দুর্ভোগ তৈরির জন্য বিআরটিএ’কে দায়ী করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর প্রজ্ঞাপন বাতিল করে অসহায় যাত্রীদের ভাড়া নৈরাজ্যকারী অটোরিকশা চালকদের হাতে তুলে দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্তির দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্য মো. জিয়াউল হক চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ আরিফ হোসেন প্রমুখ।