সৈয়দ আলী আহসান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার: আবদুল হাই শিকদার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১৬ পিএম

ছবি: যুগান্তর
বাংলাদেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার।
তিনি বলেন, কলকাতার চামচ দিয়ে চিনি খাওয়া
লোকেরা আলী আহসানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের
নামে পুরোটাই ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার ফটোকপি করা হয়েছে। এসব লোকই সৈয়দ আলী আহসান
সম্পর্কে কুৎসিত কথা বলে গেছেন।
শনিবার বিকালে একুশে বইমেলার মূলমঞ্চে
অনুষ্ঠিত ‘জীবন ও কর্ম: সৈয়দ আলী আহসান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে
এসব কথা বলেন যুগান্তর সম্পাদক।
অনুষ্ঠানের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক
মুহম্মদ আবদুল বাতেন। কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন তারেক রেজা
এবং মহিবুর রহিম।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, সৈয়দ আলী আহসান
ছিলেন বহুমাত্রিক বহু বর্ণিল প্রতিভার অধিকারী। তিনি বাংলা সংস্কৃতির জন্য একজন বলিষ্ঠ
কণ্ঠস্বর ছিলেন। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা ও বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত
করার ক্ষেত্রে সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন অনন্য। তার অসাধারণ কাজ ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’।
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ নামে উদ্ভট এক পৃথিবী কল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে
বাংলা সাহিত্যের অন্যন্য খণ্ডগুলো সমাপ্ত করেন।
বাংলা একাডেমিতে সৈয়দ আলী আহসানের একটা
অডিটোরিয়ামের নামকরণ করার দাবি জানান যুগান্তর সম্পাদক। পাশাপাশি আলী আহসানের ঋণ স্বীকার
করে তার নামে একটা ‘স্মারক গ্রন্থ’ তৈরির দাবিও জানান তিনি।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, একটি দেশের স্বাধীনতার
৫৩ বছরেও সাংস্কৃতিক নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন পরিচালিত হচ্ছে
কিছু অধ্যাদেশ ও ডিরেকশনের আওতায় আন্দাজের ভিত্তিতে। এর ফলে ভারতীয় আধিপত্যবাদীরা সাংস্কৃতিক
আগ্রাসন চালানোর অবারিত সুযোগ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও
বীরদের নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো নাটক লেখা হয়নি। এ দেশে হাজী শরীয়তুল্লাহ, মুক্তিযুদ্ধ,
বায়ান্নর আন্দোলন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের কোনো নাটক পাওয়া যায় না। টিভিতে যা নাটক
দেখানো হয়, সস্তা কাহিনিতে ভরপুর। ভারতে বাংলাদেশে একটা চ্যানেলও দেখানো হয় না, নিষিদ্ধ
করে দেওয়া আছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতের সব চ্যানেলের জন্য দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া
আছে। গলিত পুঁজের মতো এ দেশে ভারতীয় সংস্কৃতি প্রবেশ করছে।
লেখক মুহম্মদ আবদুল বাতেন বলেন, কবি ও
মনীষী সৈয়দ আলী আহসান আমাদের দেশ, জাতি ও ভাষার একজন সেরা পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব। তিনি
একইসঙ্গে কবি ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মান
অর্জন করেছেন। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার বিচরণ ছিল অবাধ। শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাহিত্য
ও শিল্প সমালোচক হিসেবে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। আধুনিক বাংলা কবিতায় ভাষা ও ভাবের
স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিতে সৈয়দ আলী আহসান পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, সৈয়দ আলী আহসানের
কর্মপরিধি ব্যাপক। বাংলা গদ্যে ও কবিতায় নিজস্ব সৃষ্টিশীলতার ছাপ রেখেছিলেন তিনি। সাহিত্যের
এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেদিকে তিনি দৃষ্টিপাত করেননি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার
পাশাপাশি বাংলাদেশের সমালোচনা-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে
বাংলা সাহিত্যের সংযোগকে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন এই খ্যাতনামা সাহিত্যিক।