Logo
Logo
×

জাতীয়

যে ভাবনা থেকে ভালোবাসা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত, জানালেন শফিক রেহমান

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম

যে ভাবনা থেকে ভালোবাসা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত, জানালেন শফিক রেহমান

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ। বাংলাদেশেও এই দিবস পালিত হচ্ছে। নব্বইয়ের দশক থেকে এই দিবস পালন হয় বাংলাদেশে।

এ দেশে ভালোবাসা দিবসের ধারনাটি পাশ্চাত্যের ভ্যালেন্টাইনস ডে থেকেই এসেছে। এ দিনে ফুল, চকলেট, পোশাক ও উপহারসামগ্রী আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।

‘আমি সব সময় চেয়েছি সব ধরনের ভালোবাসায় পূর্ণ থাকুক প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি সম্পর্ক, তাহলে মানুষে-মানুষে হানাহানি, প্রতিহিংসা আর বিদ্বেষ থাকবে না।’ কথাগুলো বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের, যিনিপাশ্চাত্যের ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের মধ্য দিয়ে একে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

এক সময়ের বহুল প্রচারিত ও পাঠকনন্দিত সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক (বর্তমানে যায়যায়দিন প্রতিদিন এর সম্পাদক ) শফিক রেহমান। তিনি ১৯৯৩ সালে তার সাপ্তাহিকীতে ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে পৃথক একটি সংখ্যা বের করেন । তারপর থেকেই সারাদেশে ভালোবাসা দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শফিক রেহমান সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর মুখোমুখি হন।  

কোন পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের বিষয়কে প্রাধান্য দিলেন-এমন প্রশ্নে শফিক রেহমান বলেন,‘ছোটবেলায় আমি অনেকগুলো গণহত্যা দেখেছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৪৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকের ঘটনাবলী। আরেকটি হলো ১৯৪৬ সালের ‘কলকাতা গ্রেট রায়ট’।

এগুলো আমার ভেতরে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। আমি সবসময় মৃত্যু ও মৃত্যুদণ্ডবিরোধী। আমার যুক্তি হচ্ছে তুমি মানুষকে সব দণ্ড দিতে পারো, কিন্তু মৃত্যুদণ্ড দিও না। আমি এসব সমর্থন করি না। আমি মনে করি এখনো সব সহিংসতা, অশান্তি, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর হচ্ছে ভালোবাসা। তুমি যদি কাউকে  ভালোবাসো, তাহলে তুমি মানুষকে মারতে পারবে না। মানুষই একমাত্র প্রাণী যে স্বজাতিকে খুন করে। মানুষ পরিবর্তনশীল, সভ্যতা পরিবর্তনশীল, এটাই সত্য। সুতরাং মানুষকে বদলাতেই হবে। সেখানেই মানুষের অগ্রগতি।

বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন শুরু হয় আপনার হাত ধরে, কোন ভাবনা থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন-এমন প্রশ্নে শফিক রেহমান বলেন, বহুদিন দেশের বাইরে থাকলেও দেশের ও দেশের মানুষের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা অনুভব করেছি সবসময়। আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশে একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকা দরকার।

মানুষে মানুষে বিভাজন দূর করতে হবে। দেশের মানুষের শান্তি দরকার। আমি ভেবে দেখলাম এ দেশে শান্তি আনতে হবে। সবাইকে সহনশীল আর অহিংস হতে হবে। সুতরাং ভালোবাসা দিয়ে শুরু করতে হবে। ’৯২ তে যায়যায়দিন কাগজ বের করলাম। ’৯৩ তে আমি প্রথম ভালোবাসা সংখ্যা বের করলাম। নানা কথা চিন্তা করে বিশেষ একটি দিবস হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে বেছে নিলাম। তবে তা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। ভ্যালেন্টাইনস ডে-নাম দিলাম না।

পশ্চিমে ভ্যালেন্টাইনস ডে প্রেমিক প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সীমাবদ্ধ। আমি ভাবলাম বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস হবে এদেশের প্রেক্ষাপটে। ‘ভালোবাসার  দিন হবে সবার’।

আমার সহকর্মীদের বললাম, সবচেয়ে বড় ভালোবাসার সম্পর্ক মা ও ছেলের সম্পর্ক। দেখতে পেলাম, ‘মায়ের দোয়ায় চলিলাম’ শিক্ষিত-অশিক্ষিত যেই হোক তাদের সিএনজি, রিকশা,বাস, ট্রাক,কোচ-ব্যানার,দোকানের নাম কিংবা বিলবোর্ড-সব জায়গায় ‘মা’ কে কেন্দ্র করে চলে। এটাই একমাত্র সত্যি সম্পর্ক যেখানে কোন স্বার্থ নাই। যেখানে সন্তান তার মাকে ভাল রাখবে, মাও তার সন্তানকে ভাল রাখবে। পিতার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলেও সন্তানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয়। একমাত্র সব স্বার্থের উর্ধ্বে ‘মা’ আর সন্তানের সম্পর্ক। তো, ভালোবাসা দিবসটাকে পারিবারিক রূপ দিতে হবে। সেজন্য এটাকে ভ্যালেন্টাইনস ডে বাদ দিয়ে ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে পালনের কথা ভাবলাম।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম