Logo
Logo
×

জাতীয়

পরতে পরতে নিষ্ঠুরতার চিহ্ন

আয়নাঘরে অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন আজমী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬ পিএম

আয়নাঘরে অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন আজমী

ফাইল ছবি

গোপন বন্দিশালা। ছোট ছোট কক্ষ। নোংরা-স্যাঁতসেঁতে এসব কক্ষে অমানবিক ও বিচারবহির্ভূতভাবে বন্দিদের আটকে রাখা হতো দিনের পর দিন। কোনো কোনো কক্ষের দেওয়ালে লেখা রয়েছে দোয়া, সাংকেতিক চিহ্ন। সেখানে সেই সময়ের সাক্ষী হিসাবে এখনো আছে বন্দিদের আটকে রাখার খুপরি, বৈদ্যুতিক চেয়ারসহ নির্যাতনের যন্ত্র। সেখানকার প্রতিটি কক্ষের পরতে পরতে যেন নির্মম নিষ্ঠুরতার চিহ্ন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গড়ে ওঠা এসব গোপন নির্যাতনকেন্দ্র (টর্চার সেল) ও বন্দিশালা পরিচিতি পায় ‘আয়নাঘর’ নামে। 

বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর কচুক্ষেত, উত্তরা, আগারগাঁও এলাকায় বিগত সরকারের তিনটি আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিও ছিলেন। আরও ছিলেন আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরা কয়েকজন ভুক্তভোগীও। পরিদর্শনে গিয়ে আয়নাঘর নামের এই গোপন নির্যাতনশালা সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা যেন নিষ্ঠুর নির্যাতনের উপাখ্যান। তারা জানান, নির্যাতন চলত সর্বক্ষণ। একই জায়গায় বন্দিকে প্রস্রাব-পায়খানা, গোসল করতে হতো। জায়গাটার আয়তন সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ফুট বাই চার ফুট। বছরের পর বছর, মাসের পর মাস সেখানে এভাবে রাখা হতো তাদের। খুপরি ঘরগুলোতে সারাক্ষণ চলত এগজস্ট ফ্যান, ফ্যান বন্ধ হলেই ভেসে আসত কান্না, আর্তনাদ আর গোঙানির শব্দ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের গোপন টর্চার সেলে (আয়নাঘর) আটকে রাখা হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে দুই উপদেষ্টা তাদের আটকে রাখা কক্ষগুলো দেখে চিনতে পারার কথা জানান।

এদিকে বহু বছর আয়নাঘরে বন্দি থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আজমী, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাশেম আরমান, হুম্মাম কাদের চৌধুরীও তাদের বন্দিজীবনের কথা তুলে ধরেন। যেসব কক্ষে তাদের বন্দি রাখা হয়েছিল, সেগুলো দেখিয়ে তারা কিভাবে বন্দি রাখা হতো, কিভাবে নির্যাতন করা হতো, সেসবের নিদারুণ বর্ণনাও দেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আজমীও উপদেষ্টার কাছে তাকে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, পুরো শরীরে রাস হয়ে যেত। হাঁটতে পারতাম না। চলতে পারতাম না। কিছু খেতেও পারতাম না। এদিকে বুধবার বিকালে এক ফেসবুক পোস্টে আবদুল্লাহ আজমী আয়নাঘর পরিদর্শনে তাকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বহুল প্রতিক্ষিত আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। আমাকে উনার সফরসঙ্গী হিসাবে নেওয়ায় আমি উনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বলতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশে তো বটেই, সম্ভবত: গোটা পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন যে একজন সরকার প্রধান তার পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদ জালেম সরকারের জুলুমে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মযলুমকে সঙ্গে নিয়ে নির্যাতনস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন। পৃথিবীর সব শাসকদের জন্য এটা একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।’

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাশেম আরমান উত্তরায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১ কম্পাউন্ডে ছোট্ট আয়নাঘর, গোপন কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, যেখানে তাকে আট বছর ধরে শেখ হাসিনার পোষা নিরাপত্তা বাহিনী গোপনে রেখেছিল। আজ তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের কাছে ঢাকায় আয়নাঘর পরিদর্শনকালে তার অগ্নিপরীক্ষার কথা বর্ণনা করেন।’

এক দশক আগে মাত্র ১১ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে গুমের শিকার হন আফসানা নূরে আলিয়া। পরে সে আয়নাঘর থেকে মুক্তি পায়। তবে এখনো মুক্তি মেলেনি তার মায়ের। আলিয়া প্রধান উপদেষ্টার কাছে তার করুণ স্মৃতির কথা তুলে ধরে মায়ের সন্ধান চান এবং অপরাধীদের বিচার চান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম