কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ পিএম

ফাইল ছবি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও নিয়োগ না পাওয়ার প্রতিবাদে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপের নিয়োগপ্রত্যাশীরা।
তারা রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে কোটায় নির্বাচিত হওয়া ৬ হাজার ৫৩১ জনের ফল বাতিল করেন হাইকোর্ট। আদালত মেধার ভিত্তিতে নতুন করে ফল প্রকাশের আদেশও দেন। সেদিন রাত থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা।
অবস্থানরত প্রার্থীরা বলছেন, দুপুরে তাদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে আলোচনার জন্য গেছেন।
সচিবালয়ে যাওয়া ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের একজন জান্নাতুল নাইম বলেন, সচিবালয়ে গিয়ে আমরা সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আগে আমাদের যেমন আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবারো সেই একইভাবে আশ্বস্ত করে বলা হয় যে এটা আদালতের রায়, এর এখতিয়ার হচ্ছে বিচারকের। তারা বললেন— সরকারের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে।
তিনি বলেন, সচিবের পর আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি বললেন— আপনাদের ৬ হাজার ৫৩১ জনের মধ্যে কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না। এরপর তো আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। আমরা উপদেষ্টা মহোদয়কে একটা কথাই বললাম, যেন অতি দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমাদের নিয়োগ প্রদান করা হয়।
নাইম আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সবসময় শুধু আশ্বস্ত করা হচ্ছে। আগেরবার আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম, কিন্তু এবার আর ঘরে ফিরব না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মানা না হবে আমরা রাজপথে থাকব এবং আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।
নিয়োগ বাতিল হওয়া নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাচিত প্রার্থী আবুল হাশেম বলেন, সোমবার রাত থেকে আমরা লাগাতার অবস্থানে আছি। কোটা পুনর্নির্ধারণ করার আগে আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। সরকার আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন। হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তা বৈষম্যমূলক।
হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিলে আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আলটিমেটাম ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
এর আগে গতকালও প্রাথমিকের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেছিলেন। পরে পুলিশ জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে তাদের সরিয়ে দেয়। তখন বেশ কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বলছেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩ বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন থামছে না।
তারা আরও বলছেন, সুপারিশপ্রাপ্তরা নিজ জেলা সিভিল সার্জনে এরই মধ্যে মেডিকেল টেস্ট করে এবং জেলা শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ফরম জমা দিয়েছে। দেশের সব জেলার প্রায় সব উপজেলাগুলোর চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তরা যোগদানপত্রও হাতে পেয়েছেন। এরপরও যোগদান করতে না পেরে ৬ হাজার ৫৩১টি পরিবার সীমাহীন লাঞ্ছনার মধ্যে পড়েছে। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের কাছে আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে উপদেষ্টা বলেন, হাইকোর্টে একটা রায় হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি রায় পুনর্বিবেচনার জন্য।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করেন হাইকোর্ট। মেধার ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগের নির্দেশ দেন আদালত।