Logo
Logo
×

জাতীয়

সংবাদ সম্মেলনে এলজিআরডি উপদেষ্টা

পিরোজপুরে উন্নয়ন প্রকল্পে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা লোপাট

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

পিরোজপুরে উন্নয়ন প্রকল্পে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা লোপাট

ফাইল ছবি

পিরোজপুর জেলার ১৭টি সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সোমবার দুপুরে রাজধানীর ফুলবাড়ীয়ার সিটি করপোরেশনের নগরভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন ১৭টি প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে স্থানীয় নেতারা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সরকারের বিপুল অর্থ আÍসাৎ করেছে। দরপত্র, বিল ছাড়, কাগজপত্র মেইনটেইনের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম নিয়ম-কানুনও মানা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই কাজের একাধিকবার বিল পরিশোধের ঘটনা ঘটেছে।  

আসিফ মাহমুদ বলেন, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে যারা পিআরএলে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিএজিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া যারা এখনো চাকরিতে আছেন তাদের সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সবার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এলজিইডির পিরোজপুরের ওই প্রকল্পের বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেসব খবরসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তদন্তের দাবি জানান এই ব্যক্তি। ওই সূত্র ধরে এলজিইডি প্রথমে ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ১ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক অনিয়ম ও লোপাটের চিত্র খুঁজে পায়। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি আরও ৬০০ কোটি টাকার বেশি অনিয়ম পেয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় অভিযুক্ত কে তা চিহ্নিত করতে দাখিলকৃত ৩টি প্রতিবেদন, পিরোজপুর জেলার স্থানীয় জনগণের মতামত, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেনÑপিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর ও ইন্দুরকানী) আসনের সাবেক মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম, পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম (মহিউদ্দিন মহারাজের ছোট ভাই), নাজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নুরে আলম শাহীন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।      

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিরোজপুরে এলজিইডি প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ১১ জন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেনÑএলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদার (পিআরএল ভোগরত), সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক একেএম মোজাম্মেল হক খান, মোহাম্মদ জাকির হোসেন মিয়া, সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী-নাজিরপুর, মো. বদরুল আলম, উপজেলা প্রকৌশলী ভাণ্ডারিয়া, নেছারাবাদ উপজেলার সার্ভেয়ার রিপন হালদার, প্রকল্প পরিচালক মো. আদনান আখতারুল আজম, প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত সুখরঞ্জন রায়, প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আহম্মদ আলী (পিআরএল ভোগরত) এবং প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান (পিআরএল ভোগরত)।   

স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আগে আলোচনায় আসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তাই এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারত অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে। এখন হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে নানাভাবে মিথ্যাচার করছে। আমরা আশা করছি, ভারত আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে আর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে না।

তিনি বলেন, বিগত হাসিনা সরকারের আমলে তিনটি ভুয়া নির্বাচনের বিষয়ে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে এড়িয়ে গেছে। অথচ একটি ভবন ভাঙার বিষয়ে তারা বিবৃতি দিচ্ছে। এতে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এখানে ভারতের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম