Logo
Logo
×

জাতীয়

ঢাকা মেডিকেলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ইয়াসিন-কাশেমরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ এএম

ঢাকা মেডিকেলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ইয়াসিন-কাশেমরা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের তীক্ষ্ণ সাইরেনের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে শঙ্কটাপন্ন রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের কান্না, বুকফাটা আর্তনাদ। আর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) সাড়াশব্দহীন পড়ে রয়েছেন ইয়াসিন আরাফাত। তার মাথা আর সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের অসংখ্য আঘাত। লাইফ সাপোর্টে থাকা ইয়াসিনকে নির্মমভাবে কুপিয়েছে গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সন্ত্রাসী বাহিনী। হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হামলার শিকার ইয়াসিনসহ আরও ৭ জন হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। 

রোববার সরেজমিন হাসপাতালে দেখা যায়, চতুর্থ তলায় আইসিইউ-এর ৩ নম্বর বেডে নিঃশব্দে শুয়ে আছেন ইয়াসিন আরাফাত। দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ডা. সোমেন যুগান্তরকে বলেন, ‘তার মাথায় মারাত্মক জখম রয়েছে। ৭২ ঘণ্টা গেলেই বলা সম্ভব হবে তার শরীরের প্রকৃত অবস্থা কেমন। এখন লাইফ সাপোর্টে আছেন। জ্ঞানের মাত্রা একেবারেই কম। ইয়াসিন এখনো চরম শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।’ 

ইয়াসিনের বড় ভাই শরীফ জানান, তারা গরিব মানুষ। ইয়াসিন বাবার সঙ্গে ছোট্ট মুদির দোকানে বসত। তাকে মোজাম্মেলের সন্ত্রাসী বাহিনী হত্যা করতে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়েছে। তার ভাই বাঁচবে কি না– চিকিৎসকরাও বলতে পারছেন না। সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে তার ভাইয়ের মতো পরিণতি করার দাবি জানান শরীফ। 

আইসিইউ-এর ২১ নম্বর বেডে শুয়ে আছেন ১৭ বছরের কাশেম। কাশেমের মা-বাবা, ভাই– আপন বলে কেউই নেই, সবাই মারা গেছেন। এতিম কাশেমের পাশে স্বজন বলতে আছেন গ্রামের আল আমিন নামের এক ব্যক্তি। আল আমিন জানান, কাশেম খুবই ভালো ছেলে। তার বাবা জামাল মিয়া, মা রেখা বেগম ও ভাই হাতেম মারা গেছেন। একাই থাকেন কাশেম। গ্রামে ডাকাত পড়েছে শুনে প্রতিরোধে এগিয়ে গিয়েছিল কাশেম। ওই সময় মোজাম্মেলের লোকজন তাকে কুপিয়েছে। সে বারবার বলছিল, ডাকাতের কথা শুনে এসেছে–এ কথা বলার পরও তাকে কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রাখে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুজনেরই অবস্থা শঙ্কটাপন্ন। 

এদিকে রোববার দুপুরের দিকে জ্ঞান ফিরেছে চিকিৎসাধীন কাজী ওমর হামজার (২১)। তার মাথা ও শরীরজুড়ে ব্যান্ডেজ আর অসংখ্য সেলাই। হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ভবনের ৬ তলায় ওমর হামজাসহ আরও ৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবারই মাথা ও শরীরজুড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। ওমর হামজার মা তাসলিমা আক্তার ব্যাকুল হয়ে ছেলের কষ্টে কান্না করছিলেন। তিনি জানালেন, আজ (রোববার দুপুরে) ছেলের জ্ঞান ফিরলেও কাউকে চিনতে পারছে না। সন্ত্রাসীরা মাইকে ডাকাত এসেছে– এমন ফাঁদ পেতে আমার সন্তানসহ বহু মানুষকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ডাকাত প্রতিরোধে আমার ছেলে ওই বাড়ির সামনে যেতেই ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। 

পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ করা আবিদ খান কথা বলতে পারেন না। চোখে-মুখেও ধারালো অস্ত্রের আঘাত। পাশে থাকা মা পারভীন আক্তার বলেন, ‘সস্ত্রাসীদের ধরে শুধু আইনি ব্যবস্থায় জেলে দিলেই চলবে না। আমার সন্তানকে যেভাবে কুপিয়েছে, তাদেরও ঠিক এমন দশা করতে হবে। তাছাড়া সন্ত্রাসীরা কবে গ্রেফতার হবে কে জানে? কত নির্মমভাবে কুপিয়েছে, তা চোখে না দেখলে কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে না। 

তিনি বলেন, মোজাম্মেলের সন্ত্রাসী বাহিনী আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। ডাকাত পড়েছে– এমন নাটক সাজিয়ে অপেক্ষায় ছিল সন্ত্রাসীরা। কথিত ডাকাতদের প্রতিরোধে সাধারণ মানুষ যেতেই অস্ত্রশস্ত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিলাররা। 

হিমেল খানের দুচোখজুড়ে সেই রাতের আতঙ্ক। তিনি বললেন, কিছু বোঝার আগেই সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। সবার হাতেই বড় বড় দা, কুড়াল, শাবলসহ ধারালো অস্ত্র ছিল। ডাকাত প্রতিরোধে যারাই ওই বাসার আশপাশে গিয়েছে– সবাইকে তারা কুপিয়েছে। কাউকে কাউকে রাস্তা থেকে কুপিয়ে বাড়ির ভেতরে নিয়ে মূল গেট আটকে দিয়েছে। তাদের বিচার প্রকাশ্যে না করা হলে ছাত্র-জনতার যে বিজয়, তা ধরে রাখা যাবে না। 

মাথায় অন্তত ২০টি সেলাই নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন ইয়াকুব আলী (৩০)। বিছানার পাশে বসা বাবা মেহের আলী বললেন, ‘ছেলে জীবনে কারও সঙ্গে ঝগড়া করেনি। মানুষের বিপদ দেখলেই উদ্ধারে এগিয়ে যায়। আমার নিরপরাধ ছেলেকে তারা খুন করতে চেয়েছিল। ইয়াকুব আলী বলেন, ‘রাতে যখন শুনতে পান মোজাম্মেলের বাসায় ডাকাত ঢুকেছে, তখন তারা গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ছুটে যান। বাসার সামনে যেতেই ওত পেতে থাকা শত শত মানুষ তাদের ঘিরে ফেলে কোপাতে থাকে। কুপিয়ে তারা উল্লাস করছিল। জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছিল। এদের চরম শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম