Logo
Logo
×

জাতীয়

গণশুনানিতে তিস্তা পারের মানুষ

আমরা দল-নেতা বুঝি না, প্রকল্পের বাস্তবায়ন চাই

এ বছরে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা

Icon

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১০ পিএম

আমরা দল-নেতা বুঝি না, প্রকল্পের বাস্তবায়ন চাই

উত্তরাঞ্চলের প্রাণ তিস্তা শুকিয়ে কঙ্কালসার ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে শত শত পরিবার আজ নিঃস্ব ও ভূমিহীন। বন্যা, খরায় তারা বিপর্যস্ত। রোববার রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা সেতুপারে আয়োজিত ‘তিস্তা নিয়ে করণীয়’ শীর্ষক গণশুনানিতে দুঃখ-দুদর্শার কথা তুলে ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিস্তাপারের মানুষ। তারা বলেন, আমরা দল বুঝি না, নেতা বুঝি না, আমরা পরিকল্পিত তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। গণশুনানিতে পানিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। 

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত প্রস্তুত করা হবে। চীনের সঙ্গে যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চুক্তি হয়েছিল তা টেকসই হতো না। তাই পরিকল্পনায় কী থাকবে, কী থাকবে না- এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং তিস্তা পারের মানুষের মতামত নিয়ে আবারও চীনের সঙ্গে এ প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। নদী ভাঙন রোধে মার্চের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নির্দেশ দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, তিস্তা কোনো দেশের একক নদী নয়। তিস্তাকে কোনো দেশের একক নদী ভাবলে তা ভুল হবে। তিনি বলেন, আমাদের বন্ধু হলে বর্ষাকালে পানি ছাড়ার আগে কেন আমাদের জানান না? অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিস্তাপারের মানুষের অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু আমাদের কাছে তেমন অর্থ নেই, তবু তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, গত সরকার প্রধান বলে গেছেন আমরা যা ভারতকে দিয়েছি-ভারত তা চিরকাল মনে রাখবে। কিন্তু ভারত মনে রাখার মতো এ দেশকে কিছুই দেয়নি। আমরা তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করব। তিস্তা যেন এ এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়। তিনি আরও বলেন, তিস্তার চরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। ফসলের ন্যায্যমূল্য যাতে কৃষকরা পান সেজন্য কোল্ড স্টোরেজ এ এলাকায় নির্মাণ করা হবে। উত্তরাঞ্চলে কৃষি শিল্পের বিপ্লব ঘটানো হবে। তিস্তা নদীতে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হবে। 

রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম তারিকুল আলম, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি, আলহাজ এমদাদুল ভরসা, একেএম মমিনুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আতিক মোজাহিদ, আবু সাঈদ লিয়ন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।

গণশুনানিতে রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলাসহ তিস্তা তীরবর্তী গ্রামের মানুষ অংশ নেন। তারা বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না, মিথ্যা আশ্বাস শুনতে চাই না। আমরা দল বুঝি না, নেতা বুঝি না, আমরা পরিকল্পিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন চাই। দল যার যার তিস্তা সবার। শুনানিতে অংশ নিয়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের রংপুরের সমন্বয়ক ইমদাদুল হক ভরসা বলেন, আমি কৃষকের সন্তান, তাই কৃষকের কষ্ট বুঝি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

গঙ্গাচড়া থেকে গণশুনানিতে অংশ নিয়ে শয়রত আলী আকন্দ (৬৫) বলেন, অতীতের সরকারগুলো তিস্তা নিয়ে কতনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমাদের বংশধররা সুস্থ জীবন পাবে। এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে মরলে শান্তি পাব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম