দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন
টিউলিপের স্থায়ী ঠিকানা ছিল গুলশানের বিলাসবহুল ভবন

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম

রাজধানী ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০তলা টাওয়ারের বাসিন্দা হিসাবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। ওই ভবনের নামকরণ করা হয়েছে তারই পরিবারের নামে। শনিবার যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
‘টিউলিপ সিদ্দিক লিস্টেড অ্যাজ রেসিডেন্ট ইন লাক্সারি বাংলাদেশি টাওয়ার ব্লক’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার এ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল। তখন তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।
গুলশানের ওই ভবনটি যে এলাকায় অবস্থিত, তা মূলত বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও বড় করপোরেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যলায়ের জন্য বিখ্যাত। আদালতের নথি ও সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্রে বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যুক্ত ‘পঞ্চম প্রপার্টি’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
তবে লেবার পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই বরং যে সম্পত্তি তার নয়, সে বিষয়ে তার কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দরকার নেই। তবে নগরমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের এক মাস পেরিয়ে গেলেও টিউলিপ সিদ্দিক এখনো তার সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয় ও বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে দেখেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির দেওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অনিচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। এ-সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ট্রেজারি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে টিউলিপের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা। অথচ তার নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত চান। অভিযোগ, লন্ডনে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকটি সম্পত্তি তিনি ব্যবহার করেছেন।
উল্লেখ্য, ৭৭ বছর বয়সি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত বছরের আগস্টে এক রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়ন চালানোর পর তিনি গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান। তার নির্দেশে চালানো দমনপীড়নের ফলে ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়। হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার ও গোপনে কারাবন্দি করার অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাজীপুরের কানাইয়ায় শেখ পরিবারের সংশ্লিষ্ট একটি পারিবারিক অবকাশকেন্দ্র খুঁজে পেয়েছে। এই বাড়ির মধ্যে ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামে একটি প্লট রয়েছে। দুদক সেটির তদন্ত করছে বলে খবর প্রকাশের একদিন পরই দ্য টেলিগ্রাফ টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও সম্পদের তথ্য প্রকাশ করে।
পুরোনো সরকারি নথি থেকে দেখা যায়, ওই সম্পত্তিকে টিউলিপের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ ঠিকানা হিসাবে উলেখ করা হয়েছিল। নথিটি ২০১৪ সালের মে মাসে ক্যামডেন কাউন্সিলরের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর তিন সপ্তাহ পরের তারিখে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে অবস্থিত ১০তলা ভবনটি ২০১০ সালের দিকে নির্মিত। একটি বিজ্ঞাপনের তথ্যানুযায়ী, ওই ভবনে ছাদবাগান, দুই ও তিন বেডরুমের ঘরের ফ্ল্যাট এবং বারান্দাসহ আবাসিক ইউনিট রয়েছে। এ ধরনের বিশাল অ্যাপার্টমেন্টগুলোর সঙ্গে ঢাকার দুই কোটি মানুষের বসবাসের পরিবেশের বড় ধরনের বৈসাদৃশ্য আছে।
ওই ভবন টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তার দাদা বা পুরো পরিবারকে উদ্দেশ করে নামকরণ করা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
এ ভবনের মালিকানার বিষয়ে জানেন-এমন এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, এটি পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমির ওপর নির্মিত। তবে পরিবারটি এখনো ওই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক কি না বা ভবনটির নামকরণ কার নামে হয়েছে, এ বিষয়ে লেবার পার্টি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক ‘সাম্প্রতিক সময়’ পর্যন্ত ওই ভবনে ছিলেন বলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তার বায়োতে লেখা ছিল। শফিক আহমেদ শেখ রেহানার স্বামী। আর রেহানা হচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন।