দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সংস্কারের রূপরেখা হলে সমস্যা এড়ানো যেত: ড. ইফতেখারুজ্জামান
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম
![দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সংস্কারের রূপরেখা হলে সমস্যা এড়ানো যেত: ড. ইফতেখারুজ্জামান](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/07/image-845329-1725113855-67a6469c5f740.jpg)
ফাইল ছবি
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট এক বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের হাল ধরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের সামনে তখন অনেক চ্যালেঞ্জ। বিগত সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটে জড়িত ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি উঠে আসে অগ্রভাবে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় রাষ্ট্র মেরামতের বৃহত্তর ইস্যু। এর অংশ হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক সংস্কার কমিশন গঠন করে। দেখতে দেখতে তাদের ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির জায়গায় এ সময়ে দেশের অগণন মানুষ কী পেল-এমন প্রশ্ন ছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের কাছে।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। বিভিন্ন খাতে গত ১৫ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, এই সরকার সেগুলো পরিষ্কার করবে, এটা অনেকের প্রত্যাশা। তবে এক্ষেত্রে তাদের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং প্রশাসনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এছাড়া বিগত সরকার অর্থনীতিকে প্রায় খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছিল। সেখান থেকে জনজীবনে দুর্ভোগ লাঘব এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করাও খুব সহজ কাজ নয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের যে এজেন্ডা, সেক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলোকে ইতিবাচকই বলতে হবে। তবে সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে শুরু থেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই এ সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের একটি রোডম্যাপ বা পথরেখা তৈরি করতে পারলে ভালো হতো। সেই পথরেখা অনুসারে সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। শুরুর দিকে সরকারের নিরঙ্কুশ জনসমর্থন ছিল। সেই সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের সুচিন্তিত পথরেখা ঘোষণা করে অগ্রসর হলে নির্বাচনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়ে পরিণত করার চেষ্টা এড়ানো যেত। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।
সংস্কার সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নে ড. জামান বলেন, সবচেয়ে বেশি সংস্কার প্রয়োজন রাজনৈতিক দলের। ভবিষ্যতে তারাই ক্ষমতায় আসবে। তাদেরই গণতন্ত্রের প্রধান চালিকা শক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দলের সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাও কোনো কথা বলছে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের চেহারা দেখতে হবে। বাইরে থেকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার তাদের ভেতর থেকেই আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ছাড়া পরিস্থিতির সত্যিকারের কোনো উন্নতি আশা করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনটি শক্তি বড় ভূমিকা রেখেছে। তাদের একটি চক্র তৈরি হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র এবং বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই চক্রের অংশ ব্যবসায়ীরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে কর্তৃত্ববাদের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছে। তাদের অনেকেই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। একজন ব্যবসায়ীকে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হলেও ব্যবসা খাতে সংস্কারে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হলেও শেষ দিকে এসে সব শ্রেণি-পেশার লোক এতে যুক্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ছিলেন। সবাই কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে এক কাতারে ছিলেন। এদের সবার চিন্তাভাবনা, ‘নতুন বাংলাদেশ’ নিয়ে প্রত্যাশা বা আকাক্সক্ষা কিন্তু এক রকম নয়। এক্ষেত্রে কিছু কিছু মিল যেমন আছে, তেমনি পার্থক্যও আছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এদের কারও কারও মধ্যে পুরোনো কর্তৃত্ববাদের কিছু লক্ষণ বা উত্থান দেখা যাচ্ছে। তার মতে, জাতীয় ঐকমত্য একটা বেশ বড় এবং জটিল বিষয়। নিরবচ্ছিন্ন জাতীয় ঐকমত্য অর্জন সম্ভবও নয় এবং ঝুঁকিপূর্ণও বটে।