Logo
Logo
×

জাতীয়

গণ-অভ্যুত্থানের ৬ মাস

প্রতিশ্রুত সহায়তা পাচ্ছে না আহত ও শহিদ পরিবার, বাধ্য হয়ে আন্দোলনে তারা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৬ এএম

প্রতিশ্রুত সহায়তা  পাচ্ছে না আহত ও  শহিদ পরিবার, বাধ্য হয়ে আন্দোলনে তারা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ৬ মাস পরও কাঙ্খিত সহায়তা বঞ্চিত আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা। উন্নত চিকিৎসা, পুনর্বাসন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতির দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ কারণে রাস্তায় নামতে হয়েছে আহত ও শহিদ পরিবারগুলোকে।  

যদিও বিষয়টি নিয়ে সরকারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আহত ও শহিদ পরিবারের দাবি পূরণে তারা কাজ করছেন। 

গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় এক হাজার শহিদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪ হাজারের মতো। আহতদের মধ্যে ৩০ জনকে ইতোমধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার প্রায় ১৪টি হাসপাতালে আহতদের বিনামূল্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসায় বিদেশি একাধিক চিকিৎসক যুক্ত করা হয়েছে। তবে এটা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর।

গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে জানান, তিনি গুলশানে একটি ফুলের দোকানে দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরিতে কাজ করতেন। ওই আয়ে তাদের সংসার চলত। আহত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। সরকার আহত ও শহিদদের তালিকা করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা প্রকাশ করতে পারেনি। 

এছাড়া চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে অংসখ্য প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনোটাই যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। আহতদের হেলথ কার্ডও দেওয়া হয়নি।

মাসুম নামে একজন জানান, ১৯ জুলাই গাজীপুরে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে তার বাবা মাহাবুল পুলিশের গুলিতে এক চোখের দৃষ্টি হারান। এখনো তার মাথায় অসংখ্য ছররা গুলি রয়ে গেছে। ৫টা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে রংপুরের বাড়িতে আছেন তিনি। কিন্তু সারাক্ষণ অসুস্থ থাকেন। 

রংপুরের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের সেবা দেওয়ার সাধ্য নেই। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিছু অর্থ সহায়তা দিলেও ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসার জন্য সামর্থ্য তাদের পরিবারের নেই। বাধ্য হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি (মাসুম)। সরকার একটি চাকরি দিলে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারতেন তারা।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার ওয়েবসাইটে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ১৩ হাজার ২৩১ জন আহত এবং ৮৪৪ জন শহিদের তালিকা আপলোড করা হয়। 

অর্থ মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ৬৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছে। শহিদ পরিবার ৩০ লাখ করে টাকা পাবে। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা এফডিআর থাকবে। আর আহতদের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। প্রতি মাসে শহিদ পরিবার ও আহতরা মাসিক ভাতা পাবেন। 

জানুয়ারিতে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আগামী অর্থবছরের শুরুতে জুলাইয়ে বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মাধ্যমে।

আহতদের ও শহিদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করছে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের গেজেটভুক্ত ৬৮৫ জন শহিদের পরিবারের হাতে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দিয়েছে ফাউন্ডেশন। এছাড়াও আহত ৩ হাজার ২৫ জনকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। আর ৪ হাজার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হবে।

জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে জানান, পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে গিয়ে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে অনেক শহিদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তারা সবাই অর্থ দাবি করছেন। এসব সমস্যা সমাধান এবং সঠিক ব্যক্তির হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দিতে বেগ পেতে হচ্ছে ফাউন্ডেশনকে। 

জানতে চাইলে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অ্যাডমিন মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘প্রতিটি শহিদ পরিবার ও আহতরা যেন আর্থিক সহযোগিতা পান সেজন্য আমরা কাজ করছি। অনেকে আন্দোলনে আহত বলে দাবি করে আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করছেন। কিন্তু তারা আন্দোলনে আহত হওয়ার তথ্য-প্রমাণ দিতে পারছেন না। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ফলে ভুক্তভোগীদের হাতে টাকা দিতে সময় বেশি লাগছে। 

তিনি বলেন, শহিদ পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একজন শহিদের প্রাপ্ত টাকা পরিবারের একাধিক সদস্য দাবি করছেন। শহিদের মা, স্ত্রী, বাবা সবাই টাকা চান। 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম