Logo
Logo
×

জাতীয়

জুলাই বিপ্লবে আহতদের ক্ষোভ-হতাশা

বারবার কেন রাস্তায় নামতে হচ্ছে আমাদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫১ এএম

বারবার কেন রাস্তায় নামতে হচ্ছে আমাদের

আমরা এখন পর্যন্ত শুধু আশ্বাসই পাইছি। কোনোটির বাস্তবায়ন হয়নি। গতকাল (শনিবার) রাতে রাস্তায় নামছি, কিন্তু এখনো আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। আমরা চাই, আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হোক। কেউ না এলে আমরা রাস্তা ছাড়ব না। আমাদের কর্মসূচি চলবে। কথাগুলো বলছিলেন আন্দোলনরত জুলাই বিপ্লবে আহত নাঈম শেখ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, আমরা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্টকে বিদায় করেছি। অনেকে অঙ্গ হারিয়েছি। অথচ সুচিকিত্সার জন্য আমাদেরকেই বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে। 

শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে বের হয়ে সড়ক অবরোধ করেন জুলাই বিপ্লবে আহতরা। এতে সড়কের দুই পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় শ্যামলীর শিশুমেলা মোড়ে ফের অবস্থান নিয়ে দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। এতে শ্যামলী, মোহাম্মদপুর ও আগারগাঁও এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। 

আহতরা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পুনর্বাসন, সুচিকিত্সা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ ও আহতদের ক্যাটাগরি বাদ দিতে হবে। এর আগে একই দাবিতে গত বছরের ১৪ নভেম্বর পঙ্গু হাসপাতালের সামনে এবং চলতি বছরের ২ জানুয়ারি শাহবাগে সড়কে বিক্ষোভ করেন আহতরা। 

এদিকে রোববার বিকালে আহতদের কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অধিদপ্তর করা হবে- সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে সড়ক ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যায় একাংশ। তবে অন্যপক্ষ দাবিতে অনড় থাকে। তারা প্রধান উপদষ্টোর বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন। রাত পৌনে ৯টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশের সড়কে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পরে সেখানেই অবস্থান নেন তারা। রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় তারা সেখানে বসেই বিক্ষোভ করছিলেন। 

আন্দোলনরত মনিরুল ইসলাম বলেন, আমদের ৭ মাস ধরে সু-চিকিত্সা, পুনর্বাসনসহ নানা দাবির জন্য রাস্তায় নামতে হচ্ছে। আমরা শেখ হাসিনাকে উত্খাত করে কী লাভ হলো। শেখ হাসিনার আমলের মতোই আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমাদের অধিকার নিয়ে বর্তমান উপদষ্টোরা সোচ্চার নয়। শনিবার থেকে আমরা সড়কে অবস্থান করছি। অথচ, এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আজকে (রোববার) বিকাল ৪টার মধ্যে যদি আমাদের বিষয়ে কোন সদ্ধিান্ত না আসে। তাহলে আমরা বিকাল ৪টার পর সচিবালয় ঘেরাও করতে যাবো। 

যাত্রাবাড়ী এলাকায় আহত হাসান বলেন, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ি এলাকায় আমি পায়ে গুলিবদ্ধি হয়েছি। বর্তমান সরকার আমাদের ফ্রি চিকিত্সা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও হাসপাতালে আমাদের চিকিত্সা দিতে অবহেলা করে। চিকিত্সকরা প্রতিদিন নির্দষ্টি একটা সময় প্রতিটি ওয়ার্ডে মুখ দেখিয়ে আসে আর যায়। ঠিকমতো তারা কোনো চিকিত্সা দিচ্ছে না। আমাদের অনেকে আছে আহত হয়ে চিকিত্সকদের অবহেলার কারণে পঙ্গু হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে চিকিত্সা করাতে গিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন করেছে। আবার কেউ কেউ বাড়ীর ভিটে মাটি বিক্রী করে চিকিত্সা করাচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, আমাদের আহতদের সু-চিকিত্সা,পূর্নবাসন ও কর্মসংস্থান এর দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না। 

আন্দোলনরত শাহীন বলেন, আমি ৪ আগস্ট গুলিবদ্ধি হয়েছি। তখন ঠিকমতো কোন চিকিত্সা পাইনি। আমাকে ডাক্তাররা ঠিকমতো চিকিত্সা দিলে আমি পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হতো না। আমি পঙ্গু হয়ে সব কিছু হারালাম। অথচ, এ নিয়ে সরকার কিংবা হাসপাতাল এবং সংশি্লষ্ট কারও কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সব কিছু আমরা বিসর্জন দিয়ে এখন আমরা মহা বিপদে। আমাদের দ্রুত তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হোক। এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।

এদিকে বিকালে সচিবালয়ে আহতদের চিকিত্সায় যুক্তরাষ্ট থেকে আসা চিকিত্সক দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদষ্টোর বিশেষ সহাকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ১২ জনের মতো ভেরিফাইড (যাচাই-বাছাই করে চিহ্নিত) হয়েছে। যাচাই বাছাইয়ের পর ১২ হাজার ৯৮১ জনের তালিকা হয়েছে। তালিকাভুক্ততের মধ্যে এখনো ১২৩৮ জনের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা যায়নি। 

স্বাস্থ্য উপদষ্টো নূরজাহান বেগম বলেন, আহতদের চিকিত্সা পূর্নবাসনে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। উন্নত চিকিত্সায় ইতোমধ্যে ৩০ জনকে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। দেশের হাসপাতালে ৫টি দেশে থেকে বিশেষজ্ঞ এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সুচিকিত্সা ও পূর্নবাসন সরকারের মূল লক্ষ্য।

এদিকে সচিবালয়ে পৃথক বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদষ্টো ফারুককই আজম বলেন, গণঅঅভ্যুত্থানে যারা আহত ও নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি সরকার অনেক বেশি সহানুভূতিশীল। তাদের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। 

তিনি বলেন, শহিদদের ব্যাপারেও সরকার অতি দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সেটা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। আহতদের ব্যাপারে ক্যাটাগরি অনুযায়ী তালিকা হচ্ছে। 

এ সপ্তাহের মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন হচ্ছে জানিয়ে এই উপদষ্টো বলেন, অধিদপ্তরের অধীনে একটা নীতিমালা হচ্ছে। এই নীতিমালার অধীনে হতাহতদের যাবতীয় সহায়তা দেবে সরকার। সরকার এ কাজগুলো যতটা দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে নিহতদের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে এবং আহতদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সহায়তা দেওয়া হবে। আহত-নিহতদের সহায়তায় চলতি অর্থবছরে ২৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আহতদের সারা জীবনের জন্য চিকিত্সা এবং অন্যান্য ভাতা দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে।'

এদিকে শনিরাব রাত থেকে রোববার দিনভর সড়ক বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় অবস্থিত শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতাল, জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতাল জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, শ্যামলী ২৫০ শয্যাবিশষ্টি টিবি হাসপাতাল ও জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়। সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরাও।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম