Logo
Logo
×

জাতীয়

বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভের উদ্বোধন

‘আ.লীগের গণহত্যার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ছবি-ভিডিও’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম

‘আ.লীগের গণহত্যার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ছবি-ভিডিও’

জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে পরিচালিত গণহত্যার বিচারে আন্দোলনকালীন ছবি-ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর পান্থপথে ‘বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভ’র (বিপিএ) উদ্বোধনী উপলক্ষ্যে এক আলোচনায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, এত বড় একটা অন্যায় আমাদের দেশে হয়ে গেছে। আরেকবার যেন কোনো সরকার কোনোভাবে এ জিনিস না করতে পারে। এমন করে কেউ যেন পার পেয়ে না যায়।     

শহিদুল আলম বলেন, ‘কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময়কার একজন ব্যক্তির স্রেফ দাঁড়িয়ে থাকার ছবিও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। মনে হতে পারে এটি দিয়ে আর কী হবে, ছবিটি ঝাপসা একেবারে তেমন কিছুই এতে নেই। কোনো রকমের এই ছবিটির কী গুরুত্ব থাকতে পারে। আমরা সবসময় উপলব্ধি করি না, আমার কাছে যেটি আছে এটি যে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি হয়তো বললেন ওই সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। কিন্তু ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন।’

বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভ প্রসঙ্গে শহিদুল আলম বলেন, ‘আর্কাইভ আয়োজনটিতে যারা ছবি-ভিডিও দিচ্ছেন তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয়টি যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। সে যেন বিপদে না পড়ে।’

লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই। আনসার বিদ্রোহ নিয়ে আমি একটা কাজ করেছিলাম, যেজন্য ফরহাদ মজহার জেলও খেটেছিলেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বধ্যভূমি হয়ে থাকবে আরও বহুবছর। নাহলে দেখুন এই সরকারের আমলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে। এজন্য এসব কাজের বেলায় সরকার থেকে দূরে থাকার বিষয় আছে। যদি অনেক দূর যেতে হয়, রাষ্ট্র এবং সরকার থেকে দূরে থাকতে হবে।’

আলতাফ পারভেজ আরও বলেন, ‘আমি পুরোনো মডেলের মানুষ। ডিজিটাল আর্কাইভিংয়ের বিষয়ে আমি একদম জিরো। পুরোনো ধাঁচে আমি আমার মতো করে আর্কাইভ করি। জুলাই-আগস্ট নিয়েও পুরোনো পদ্ধতিতেই আমি আমার মতো করে আর্কাইভ করেছি। খাটের নিচে অনেক পেপার জমে গেছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালে অনেক সময় ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এজন্য পত্রিকার সমালোচনা করলেও সংবাদপত্রগুলো দেখা জরুরি।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য মুসতাইন জহির বলেন, ‘আমরা জানি একটা ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু আমরা যদি চিহ্নিত করতে না পারি আসলে ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে, কে এতে জড়িত। তাহলে রাজনৈতিক বয়ান তৈরিতে সমস্যা হয়। আন্তর্জাতিক পরিসরে বা দেশের ভেতরে অনেকেই বলছেন, গণহত্যা হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতেও বলব, আওয়ামী লীগ গণহত্যা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো নেতা গণহত্যা ঘটিয়েছে। পুলিশ যাত্রাবাড়ী থানায় দিনের পর দিন গুলি করেছে। জানতে হবে, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা করেছে। এসব বিস্তারিত যখন আপনি জানতে পাারবেন না, আমরা তখন আবার একটা জাতীয় সমস্যার মধ্যে পড়ব। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটতে পারে সেজন্য আর্কাইভ করার যে কাজটি বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভ করছে, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বিপিএ’র লিড ইনভেস্টিগেটর কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যম থেকে ভিডিও নিয়ে তার বিস্তারিত লিখে একটা জায়গায় রাখা একটা প্রাথমিক কাজ হিসেবে ঠিক আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটা ভিডিও ধরে ধরে পুরো ঘটনা নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করা। আমাদের উদ্দেশ্য সেটাই। তা হয়তো অনেক সময়ের বিষয়। আগামী দুই তিন বছর মিলেও যদি একশটা ঘটনা নিয়ে এমন বিস্তারিত রিপোর্ট করতে পারি তাহলে সেটি দুর্দান্ত ব্যাপার হবে।’

কদরুদ্দিন শিশির আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে আন্দোলনকালীন ছবি-ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য বিগত স্বৈরাচারী সরকার ছবি-ভিডিও মুছে ফেলতে তৎপর ছিল। যাত্রাবাড়ীর অন্তত বিশজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্পটগুলোর কাছাকাছি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিভাইসগুলোর দখল নিয়েছিল এবং ছবি-ভিডিও মুছে দিয়েছিল।’

ইনভেস্টিগেটর মিনহাজ আমান বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনের সময়কার ছবি-ভিডিও নিয়ে কাজ করছি এখন। কিন্তু আর্কাইভ করার বিষয়টি আমার অনেকদিনের। ওপেন সোর্স থেকে আর্কাইভ করতে গেলে শুরুতেই আমরা পত্রিকাগুলোর শরণাপন্ন হই। আমি গত ২২ বছরের হত্যাকাণ্ডের একটা আর্কাইভ করছি। সেটা করতে গিয়ে দেখতে পেলাম, দেশের দুটি পত্রিকার বাইরে সিস্টেমেটিক আর্কাইভ নেই।’

মিনহাজ আমান বলেন, ‘২০-৫০ বছর পরেও যেন কেউ চাইলে ভিডিওগুলো ব্যবহার করতে পারি, আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করছি। বিচারের কাজে সহযোগিতা হবে এটি আমাদের প্রথম চাওয়া।’

ভিজুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন উইটনেসের সিনিয়র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক) অরুল প্রকাশ সিন্নাপ্পান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভের উদ্বোধনী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে বিপিএর উদ্যোগটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। পরে উইটনেস কর্মকর্তা হুয়ে শিন চাও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ প্রটেস্ট আর্কাইভের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শোয়েব আব্দুল্লাহ তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আর্কাইভের কাজের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি সাধারণত অনুসরণ করা হয়, গোপনে থেকে করা হয় আবার প্রকাশ্যে সবার জন্য বা বিশেষ বিশেষ লোকজনের জন্য উন্মুক্ত রেখে করা হয়। প্রথমে আমরা গোপনেই কাজটি করব বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নিলাম এটি প্রকাশ্যে করতে হবে।’

শোয়েব আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি করে যেটি চাই, বিচারের কাজে যুক্ত যারা রয়েছেন। তদন্তসংশ্লিষ্টরা যদি এসব ভিডিও থেকে উপকৃত হন তাহলে আমাদের এ উদ্যোগ সার্থক হবে। তবে কাজটি দীর্ঘমেয়াদি, ১০ বছর পর এর গুরুত্ব কতটা সেটা আমরা জানি। কিন্তু এক-দুবছর পর কী হবে তা বলা মুশকিল এই মুহুর্তে।’

শোয়েব বলেন, ‘ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও এক্স-এই চার প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা দেড় হাজার ভিডিও আমরা আর্কাইভ করেছি, যেগুলোর সম্পর্কে টেকনিক্যাল ডাটাসহ অনেক তথ্য আমাদের এখানে রয়েছে। কেউ ভিডিওগুলো নিতে চাইলে পয়সা দিতে হবে না। ভিডিওর মালিককে ক্রেডিট দিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।’

পরে প্যানেল আলোচনাটির সঞ্চালনাও করেন শোয়েব আব্দুল্লাহ। এতে উপস্থিত শতাধিক দর্শক-শ্রোতার মধ্য থেকে অনেকেই প্রশ্নোত্তর ও মন্তব্যের পর্বে অংশ নেন।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম