কওমির সম্মেলনে নারী সাংবাদিকের সঙ্গে কী ঘটেছিল সেদিন?
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১১ পিএম
ফাইল ছবি
রাজধানী ঢাকায় কওমি উদ্যোক্তাদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে একজন নারী সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহের কাজে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বেশ আলোচনা। তবে নারী সাংবাদিককে প্রবেশে বাধার বিষয়টি জানতেন না ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
বুধবার ঢাকায় আগারগাঁয়ে অবস্থিত চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কওমী উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫’ নামে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউএনবিতে কর্মরত ওই সাংবাদিক এমি জান্নাত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দিলে আলোচনা-সমালোচনার সূত্রপাত হয়। সেদিন কী ঘটে ছিল এমি জান্নাতের সঙ্গে তা ওঠে এসেছে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে।
এমি জান্নাত জানান, অফিস থেকে দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে বুধবার বিকাল ৩টায় চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যান তিনি।
জান্নাত বলেন, ‘গেট দিয়ে ঢোকার সময় গার্ডরা বলে- আপনি তো ঢুকতে পারবেন না। কওমি, উনাদের প্রোগাম। উনারা মানা করছে। ভলান্টিয়ার আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলেন- ওরা যেতে দেয় কিনা।’
অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে চেয়ে আরও ২০ মিনিট অপেক্ষার পর নিরাপত্তা প্রহরীরা ভেতর থেকে জেনে এসে মিজ জান্নাতকে বলেন, ‘মেয়েদের ভেতরে যেতে দেওয়া হবে না।’
পরে তিনি তার অফিসকে এ বিষয়ে অবহিত করেন।
একইসঙ্গে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
জান্নাত তার পোস্টে লিখেছেন, ‘দেশের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের মধ্যে মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টাকে শুধু আলাদা করে ছেলেদের সেবায় কাজ করার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে কি না, প্রশ্ন রেখে গেলাম। যদি এটাই হয়ে থাকে, স্পষ্টত উল্লেখ করে কাজ করার অনুরোধ।’
তিনি আরও লেখেন, ‘একজন ‘নারী’ সাংবাদিক বলে নিউজ কাভার করতে পারবে না, এটা কতটা দুঃখজনক এবং অবমাননাকর, বলতে পারেন?’
মন্ত্রণালয় থেকে অনুষ্ঠানটি কাভার করতে যে আমন্ত্রণ করা হয়েছে তাতে নারী রিপোর্টার পাঠানো যাবে না এমন বিষয় কেন উল্লেখ করা হয়নি সে বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগেও বহুবার এ সংক্রান্ত প্রোগ্রাম কাভার করতে গিয়ে করতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে জান্নাত লিখেছেন, ‘আবার তাদের মধ্যেই অনেকে ভেতরে সসম্মানে ঢুকতে দিয়েছেন, আমাদের সহকর্মী ভাইয়েরা জায়গা করে দিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো দেশের দায়িত্বে থাকা সুনির্দিষ্ট কারও প্রোগ্রাম না হওয়ায় চুপ থেকেছি।’
জান্নাত ধর্ম উপদেষ্টার অনুষ্ঠানে নারীদের প্রবেশ নিয়ে এ ধরনের নির্দেশনা যারই হোক সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে পারেন কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
ফেসবুকে এমির এই পোস্টের পরে দেশটির গণমাধ্যমকর্মীদের অনেককেই এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বুধবারের ওই অনুষ্ঠানে ইতিবাচক মানসিকতা থেকে গিয়েছেন। এটাকে আমি মনে করছি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, আর্থিক সচ্ছলতা আসবে। এটা যদি বাইরে যায় তবে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। তারা ইনভেস্ট করবেন, বাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কম্পিটিটিভ বাজার তৈরি হবে। এজন্য এটাকে (সম্মেলন) আমি ইতিবাচকভাবে দেখেছি।
তবে অনুষ্ঠানে অবস্থানকালীন সময়ে নারী সাংবাদিককে প্রবেশ করতে না দেওয়ার খবরটি জানতেন না বলে জানান হোসেন।
‘কওমি উদ্যোক্তা’ প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রোকন রাইয়ানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে বিবিসি বাংলার কথা হয়। এই ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনায় ধর্ম উপদেষ্টার কোনো দায় নেই বলে জানান তিনি।
রাইয়ান বলেন, ‘এখানে একটা মিসলিড হচ্ছে। আমাদের অনুষ্ঠানে কোনো নারী আসতে পারবে না এ ধরনের কোনো এথিকসে আমরা বিশ্বাস করি না। এটা সবার জন্য ওপেন ছিল, সবাই আসছে। কিন্তু কোনো একজন অডিয়েন্স কর্তৃক বিষয়টা এরকম হইছে।’
আরেকজন নারী সাংবাদিকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারছি আমাদের স্বেচ্ছাসেবক নিজে চ্যানেল আইয়ের একজন নারী সাংবাদিককে নিয়ে অনুষ্ঠানে বসাইছে। ওনার নামটা বলতে পারছি না।’
এ ঘটনাকে ‘একটা ভুল’ বলে মনে করেন রাইয়ান।