Logo
Logo
×

জাতীয়

পিলখানা হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে শহিদ পরিবার

বিডিআর জওয়ানদের ঢালাওভাবে নিরপরাধ দাবি কষ্টদায়ক

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২০ এএম

বিডিআর জওয়ানদের ঢালাওভাবে নিরপরাধ দাবি কষ্টদায়ক

ছবি: সংগৃহীত

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের (বর্তমানে বিজিবি) ঢালাওভাবে নিরপরাধ দাবি ও প্রচারের ঘটনাকে বেদনা ও কষ্টদায়ক বলে জানিয়েছেন ওই ঘটনায় বেঁচে ফেরা ব্যক্তি ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, সিভিল কোর্ট ও বিডিআর কোর্টে বিপথগামী জওয়ানদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়। তাই অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত জওয়ানদের নিরপরাধ বলার কোনো সুযোগ নেই এবং তাদের মুক্তির দাবি অযৌক্তিক।

বুধবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের অ্যাঙ্কর হলে ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারবর্গ ও বেঁচে ফেরা সেনা অফিসারদে’র যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। তাদের দাবি, সব অপরাধীর প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকর করে যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ঘটনার সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শহিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, বিডিআর কার্নেজে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত সৈনিক ও তাদের পরিবারদের গত ১৫ বছর কোনো দাবি নিয়ে মাঠে আসতে আমরা দেখিনি। কিন্তু আজ তারা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিপথগামী সৈনিকদের নিরাপরাধ দাবির আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করার অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাদের এই দাবির মাধ্যমে জাতির দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত খুনিদের আড়ালের মাধ্যমে বর্তমানের ছাত্র-জনতার সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সেনা অফিসার ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপপ্রয়াস চলছে। এই খুনিদের যথাযথ বিচার না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র জড়িত আছে বলে জাতি বিশ্বাস করে, যা বর্তমান সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এর পিছনের পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে স্পেশাল ট্রাইবুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানরত দোষী ব্যক্তিদের দেশে এনে বিচার করতে হবে। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শহিদ সেনা দিবস ঘোষণার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আবেগঘন বক্তব্য দেন নিহত কর্মকর্তাদের স্বজনরা। তারা বলেন, সেদিন বিডিআর জওয়ানরাই কর্মকর্তাদের হত্যা করার পর উল্লাস করেছে, লাশ বিকৃত করেছে, অফিসারদের পরিবারের সদস্যদের বন্দি করে নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বাসস্থানে ধ্বংসযজ্ঞ-লুটপাট চালিয়েছে। এখন সেই বয়ান পাল্টে বলা হচ্ছে শুধু শেখ হাসিনা আর ভারত এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে তাদের ইন্ধন থাকতে পারে; তবে জওয়ানরা যে সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিল বেঁচে ফেরা কর্মকর্তা ও স্বজনরা তা নিজেরাই দেখেছেন।

শহিদ কর্নেল কুদরত এলাহির ছেলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক সাকিব রহমান বলেন, একটা মানুষ যদি বন্দুক ধরে তাহলেই সেটা বিদ্রোহ। শুধু যদি সেটা বিদ্রোহ হত বিষয়টা তো এমন না। তারা খুন করেছে, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বারবার বলা হচ্ছে একটা ন্যারেটিভের কথা, যে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা আর ইন্ডিয়াই বুঝি এটা করিয়েছে। তারা করাতে পারে, হতে পারে তারা করিয়েছে- সেটা কমিশনকে বের করতে দেন। যথেষ্ট অ্যাভিডেন্স আছে আমাদের। কিন্তু এটা করেছে যারা তাদেরকে আপনারা (জেল থেকে) বের করে দেবেন? এটা কী সম্ভব? তিনি বলেন, ন্যারেটিভ চেঞ্জ করা এটা কোনো মুখের কথা না। এত বড় খুন, এত বড় হত্যার পর ন্যারেটিভ চেঞ্জ করবেন আমরা বেঁচে থাকতে এটা মেনে নেব না। একেকটা পরিবারকে মারতে মারতে, বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে খোঁচাতে যে কোয়ার্টার গার্ডে নেওয়া হয়েছিল- কারা নিয়েছিল সেটা? ইন্ডিয়ানরা এসে নিয়েছিল না শেখ হাসিনা নিজে এসে নিয়েছিল? 

সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআর-এর ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার নিহত কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিন ফেরদৌসী বলেন, সঙ্গত কারণে বিগত ১৬ বছরে আমরা কিছু বলতে পারিনি। আজকে আমরা জনসমক্ষে এসেছি- যেন বিচার শুরু হয়। দোষীরা যেন শাস্তি পায়। যেভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি- ঢালাওভাবে এমন কি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মুক্তির জন্য যেভাবে আবেদন আসছে সেগুলো যেন সত্যি সত্যি না হয়। সেই শঙ্কায় আজকে আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন। তিনি বলেন, সেদিন আমাদের নাম ধরে ধরে বাসায় এসে খুঁজছিল। বলছিল ওর ছেলেটাকে পেলে আগে হাত-পা ভাঙবে তারপর মারবে। এগুলো কিন্তু বাংলায় বলছিল, হিন্দিতে বা উর্দুতে বলেনি। এগুলো যারা বলেছিল তারা কী ক্রিমিনাল না, তারা তো ক্রিমিনাল মাইন্ডেই ছিল। আর আমার হাজবেন্ডকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে এসেছিল।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারানো একমাত্র ব্যক্তি সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, আমার বাবা একমাত্র যিনি হত্যাকাণ্ডে বাধা দিতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। আজকে এখানে আমার উপস্থিতি প্রমাণ করে এটা বিডিআর এবং সেনাবাহিনীর বিরোধ না। এটা হত্যাকারীর সঙ্গে, নৃশংসতাকারীর সঙ্গে আমাদের বিরোধ। আমার বাবা হত্যাকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় তার বাহিনীর সদস্যরাই তাকে লোহার স্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে, পেট ক্ষতবিক্ষত করে, ব্রাশফায়ার করে পরে অফিসারদের সঙ্গে আমার বাবাকেও গণকবরে ফেলা হয়। তিনি বলেন, আমরা ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর যখন দেখলাম শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেল তখন বিডিআর সদস্যরা ভিন্নভাবে প্রচার করতে শুরু করল যেন শেখ হাসিনা একাই ৫৭ জন অফিসারকে মেরেছে, একাই লাশ বিকৃত করেছে, একাই তাদের গণকবরে ফেলেছে। সেখানে আর কেউ ছিল না। আমরা তো জানি আমাদের বাবাদের কে বুলেট দিয়ে হত্যা করেছে, কে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়েছে, কে গণকবরে ফেলেছে। তিনি দোষীদের দ্রুত শাস্তি দাবি করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম