Logo
Logo
×

জাতীয়

সালমানের অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:১৯ পিএম

সালমানের অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা

সালমান এফ রহমান।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভয়াবহ ঋণ কারচুপির প্রমাণ পেয়েছে সরকার। এই গ্রুপের অস্তিত্বহীন ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস কোম্পানিগুলোর নামে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা সম্পদ জামানত রেখে এর বিপরীতে ঋণ নিয়েছে ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। শুধু জনতা ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছে ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। আর সোনালী ব্যাংক থেকে নিয়েছে ১৪২৪ কোটি। মঙ্গলবার এ শিল্প গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ষষ্ঠ বৈঠকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ওই বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির চেয়ে বড় কেলেঙ্কারি করেছে বেক্সিমকো। 

তিনি জানান, এ প্রতিষ্ঠানকে যেসব ব্যাংক ঋণ দিয়েছে, সেগুলোর তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অর্থ, স্বরাষ্ট্র, শিল্পসহ পাঁচজন উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশ নেন। পরে সভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান শ্রম উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। 

তিনি বলেন, সালমান এফ রহমান সবমিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এগুলো মন্দ ঋণ কিনা-তা ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব ব্যাংক ঋণ দিয়েছে সেগুলোর তদন্ত হবে। বিশেষ করে এই পরিমাণ টাকা কিসের ভিত্তিতে ঋণ দিয়েছে তা ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে জমা রাখা এই টাকা আমাদের ও আপনাদের। ব্যাংক থেকে ওই টাকা উধাও করা হয়েছে।

ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বেক্সিমকোর লে-অফকৃত ১২টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আইনানুগ পাওনাদি শ্রম আইন ও অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, রোববার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো সভা করে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকের অবিক্রীত শেয়ার বিক্রির ব্যবস্থা করবে এবং এজন্য অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। অর্থ বিভাগ থেকে যে টাকা পাব সেটার পাওনাদার হবেন শ্রমিকরা। আইন অনুযায়ী তারা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তা সবই দেওয়া হবে। এজন্য ৫০০-৬০০ কোটি টাকা দরকার। শেয়ার বিক্রি থেকে যে টাকা আসবে এবং বাকিটা সরকার সহযোগিতা করবে। 

কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণ জানাতে গিয়ে এ উপদেষ্টা বলেন, এসব ফ্যাক্টরি আগেই লে-অফ। এখন এসব ফ্যাক্টরি চালাবে কে? দুদিন পরপর হামলা হবে এর দায় কে নেবে? অনেক আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বেক্সিমকোর লে-অফকৃত প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে না জানানোয় রিসিভারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে-তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এছাড়া তিনি জানান, বেক্সিমকোর যে দু-একটি প্রতিষ্ঠান চালু আছে সেগুলো বিক্রি করা হবে কিনা-তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জামানতের বিপরীতে ঋণের হিসাব : বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ৪ হাজার ৯৩২ কোটি টাকার সম্পদ জামানত রেখে বেক্সিমকো গ্রুপকে ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ১৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। জনতা ব্যাংক ১ হাজার ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার জামানত রেখে ঋণ দিয়েছে ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। এক হাজার ১৮৭ কোটি টাকা জামানত রেখে ১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকা জামানত রেখে ৪২০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এক হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা জামানত রেখে ৯৮৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। কোনো জামানত ছাড়াই ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইউসিবি ব্যাংক। মাত্র সাত কোটি টাকা জামানত রেখে ৯৩৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবি ব্যাংক। ২০৩ কোটি টাকা জামানত রেখে ৪৯৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। বাকি টাকা অন্যান্য ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম