ছিনতাই হওয়া মোবাইলের সন্ধানে প্রাণ গেল পোশাকশ্রমিকের
মিরপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
রাজধানীর মিরপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় এক পোশাকশ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। শুক্রবার রাত বুদ্ধিজীবি সিটি কলোনির রাজুর কাঠের দোকানের সামনে এই ঘটনা। হত্যার ঘটনায় শনিবার মামলা করেছেন নিহতের মা। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত ব্যক্তির নাম মিলন। তিনি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আহতরা হলেন- সুজন ও সোহান। তারা দুজনেই নিহত মিলনের বন্ধু।
পুলিশ জানিয়েছে, ছেলে হত্যার ঘটনায় মা মর্জিনা বেগমের করা মামলায় ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন- সূর্য্য, তোতলা রাকিব, আল-আমিন ওরফে চাপাতি আলামিন, মানিক, কাউসার ওরফে কানা কাউসার, রাসেল ওরফে টেম্পো রাসেল, সাজ্জাদ হোসেন হাসান, সজিব ওরফে গিড়া সজিব, রাজিব, সজিব ওরপে কাল্লু সজিব, আশিক, মো. সাকিব, হানিফ, সুরুজ, মেহেদী, সাব্বির, আলাউদ্দিন ওরফে পাতলু আলাউদ্দিন, রাসেল ওরফে লম্বা রাসেল, নয়ন, সাহেন শাহ, নাদিম ও ওমর আলী। আসামিদের বেশিরভাগই ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সি।
জানা গেছে, এক বন্ধুর ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারে শুক্রবার রাতে মিলন, সুজন ও সোহান সিটি কলোনিতে যান। রাজুর কাঠের দোকানের সামনে মামলার আসামিদের সঙ্গে দেখা করেন তারা। এ সময় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। ছুরি দিয়ে মিলনকে কোপাতে থাকে সূর্য্য। এ সময় মিলনকে বাঁচাতে তার দুই বন্ধু এগিয়ে আসলে তাদেরকেও কাঠ দিয়ে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। তোতলা রাকিব ও গিড়া সজিব চাকু দিয়ে সুজন এবং সোহানকে কোপায়। এতে ওই তিন বন্ধু গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে মিলন মারা যায়। বাকি দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
রোববার সিটি কলেনিতে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবারেই। সেদিন আহত সুজনের মামাতো ভাই বিপ্লব ও তার দুই বন্ধু বুদ্ধিজীবী কবরস্থান সংলগ্ন মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় সিটি কলোনির কয়েকজন তাদের মোবাইল ছিনতাই করে। বিষয়টি সুজনকে জানায় বিপ্লব। সুজন সিটি কলোনির বড় ভাই কাউছারকে জানালে তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে পুলিশকে না জানানোর অনুরোধ করেন। ছিনতইকারীদের শনাক্তসহ ধরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সেখানে যেতে বলেন। পরে বড় ভাইয়ের আশ্বাসে তিন বন্ধু সেখানে যায়। সেখানে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
সিটি
কলোনিতে বহিরাগতসহ ডিএনসিসির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির
কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন।
বস্তির আদলে গড়ে উঠেছে
এটি।
স্থানীয়রা জানান, মামলার আসামিরা মাদক সেবন, বেচাকেনা, চুরি, ছিনতাই, দেহ ব্যবসাসহ অস্ত্র বেচাকেনায় জড়িত। তাদের বেশিরভাগ অপকর্ম কবরস্থানকে ঘিরে। এরা কিশোর গ্যাং ‘উরাধুরা’ গ্রুপের সদস্য। কলোনির পাশেই তাদের আস্তানা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিশোর গ্যাংটির এক সদস্য জানান, চিত্রনায়ক শাকিব খানের ‘কোন শহরের মাইয়া গো লাগে উরাধুরা’ গানটি জনপ্রিয় হওয়ার পর এই নামে ‘উরাধুরা’ গ্রুপ খোলা হয়েছে। তারা যে কোনো কাজ উরাধুরাভাবে করেন। ৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপসগুলোতে ‘উরাধুরা’ নামে একটা পেইজও খোলা হয়। সেখানে তারা নিজেদের অপকর্মের বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করতো। ঝামেলা হওয়ায় পেইজটি আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।
মামলার
বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি রকিবুল হোসেন
বলেন, ‘এ ঘটনায় পাঁচজনকে
গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের
গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।’