বিসিএস পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে কর্মশালা
বছরে একটি পরীক্ষা শেষসহ নানা প্রস্তাব
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০১ পিএম
ফাইল ছবি
এক বছরে একটি পরীক্ষা শেষ করার রোডম্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার ও প্রশ্নফাঁস রোধসহ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা নিয়ে এক গুচ্ছ প্রস্তাব করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন : অংশীজনের ভাবনা' শিরোনামে বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্ম কমিশনের এক কর্মশালায় তারা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।
পিএসসি প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভাসহ মোট তিন ধাপে
বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এতে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও ভাইভা বোর্ডে তদবির করে নিয়োগসহ
নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সুনির্দষ্টি রোডম্যাপ না থাকায় একটা বিসিএস পরীক্ষা সম্পন্ন
করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন
(বিপিএসসি) চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য পদত্যাগ করেন। পরে অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমকে
চেয়ারম্যান করে নতুন কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থীদের বিপ্লবী
চেতনা ধারণ করে পিএসসিকে ঢেলে সাজানোর চষ্টো করছেন।
বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
সঙ্গে কর্ম কমিশনের কর্মশালায় নানা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে এসেছে। এ ছাড়া বিসিএস
পরীক্ষা জেনারেল ও টেকনিক্যাল দুভাগে ভাগ করে আলাদা সার্কুলার প্রকাশ করার পাশাপাশি
পরীক্ষকদের পিএসসিতে এনে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা, প্রশ্নফাঁস রোধে পরীক্ষার কেন্দ্রে
নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করা ও মুখস্থনির্ভর প্রশ্ন পরিহার করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাবও
তারা করেছেন।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বিষয়ক সংস্কারে যেসব প্রস্তাব
উঠে এসেছে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে প্রিলিমিনারি,
লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখের পরিবর্তে নির্দষ্টি তারিখ উলে্লখ করা, ভারতের
ইউপিএসসির মতো বছরের শুরুতে একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা, বাংলা সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য,
বিজ্ঞান, গণিত ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি লেভেল পে্লয়িং ফিল্ড
তৈরি করা, একই সঙ্গে সৃজনশীল এবং যুগোপযোগী প্রশ্ন প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়া।
৪৬তম বিসিএসে দেখা গেছে ইংরেজি প্রশ্নের জন্য ৩৫
মার্কস নির্ধারিত থাকলেও, সেখানে ৪০ মার্কের প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে
প্রাচীন ও মধ্যযুগের জন্য ৫ মার্কস নির্ধারিত থাকলেও সেখানে এটি মানা হয়নি। সেজন্য
প্রশ্নের মানবণ্টন ঠিক রেখে প্রশ্ন তৈরি করা, বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় প্রতিটি বিসিএসে
কতজন প্রিলি পাশ করানো হবে তা নির্দষ্টি করে উলে্লখ করা, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলের
সঙ্গে কাট মার্কস উলে্লখসহ প্রার্থী কত মার্কস পেয়েছে তা জানিয়ে খুদে বার্তা দেওয়া,
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার পর বিপিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নের একটি রাফ উত্তরপত্র
নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপলোড করে ৭ দিন সময় দেওয়া, যেন কোনো প্রশ্নের উত্তর ভুল পরিলক্ষিত
হলে পরীক্ষার্থী সেই প্রশ্নের উত্তর রেফারেন্সসহ বিপিএসসিকে ই-মেইল করে সচেতন করে দেওয়া
যায় এমন সুযোগ রাখা যেতে পারে। এ কাজ শেষ হওয়ার পর প্রশ্নের
সঠিক উত্তরসহ প্রশ্নপত্র ওয়েবসাইটে আপলোড করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক সময়
পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তারা পরীক্ষার্থীদের
প্রশ্নে রাফ করতে দেন না। এতে পরীক্ষার্থীদের অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই
প্রশ্নপত্রের ওপরে যে রাফ করা যাবে তা প্রশ্নের নিচে যেন উলে্লখ করে দেওয়া, পরীক্ষার
শেষে প্রশ্ন দিয়ে দেওয়া, একবার প্রিলি পাশ করলে একাধিকবার লিখিত বা ভাইভার সুযোগ দিলে
জট বৃদ্ধি পাবে, প্রিলির প্রশ্নপত্রে ভুল থাকলে সেটি প্রতিটি কেন্দ্রে দ্রুত বার্তা
পৌঁছানেরা মতো সুপারিশও উঠে এসেছে।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সংস্কারের সুপারিশে যেসব প্রস্তাব
উঠে এসেছে, পরীক্ষকদের বাসায় খাতায় না পাঠিয়ে বিপিএসসিতে এনে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা,
গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে গোলটেবিল সিস্টেমে খাতা মূল্যায়ন করা, প্রশ্নফাঁস রোধে
পরীক্ষার কেন্দ্রে নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করা, পাশাপাশি একটি ডেডিকেটেড সেল তৈরি
করা, প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে বিতরণ পর্যন্ত কঠোর নজরদারিতে রাখা, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের
জন্য নির্দষ্টি স্থান বরাদ্দ রাখা, গাণিতিক যুক্তির বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক বা অত্যন্ত কঠিন
প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া, ইংরেজিতে একটি পরিবর্তে দুটি রচনা দেওয়া, বাংলায় ২০০ নম্বরের পরিবর্তে
১০০ নম্বর রাখা, টেকনিক্যাল বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬০ শতাংশ প্রশ্ন টেকনিক্যাল
বিষয়ে রাখা ও বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে মুখস্থনির্ভর প্রশ্ন পরিহার করার
সুপারিশও উঠে এসেছে।
এ ছাড়া মেৌখিক পরীক্ষার স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য
নেটওয়ার্কবিহীন একটি ভবন করা যেতে পারে। যেখানে শুধু মেৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গ
ও পরীক্ষার্থীরা অবস্থান করবে। ফলে কোনো স্বজনপ্রীতি বা সুপারিশ করার কোনো সুযোগ
থাকবে না। মেৌখিক পরীক্ষায় যেন কোনো ধরনের অনিয়ম ঘটনা না ঘটে সেজন্য তারা চেয়ারম্যান
ও বিজ্ঞ সদস্যবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শিক্ষার্থীদের অন্যতম একটি দাবি ইউনিক আইডি
প্রদান করা, যেন এই ইউনিক আইডি দিয়েই তারা পিএসসির সব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) চেয়ারম্যান
অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, পিএসসির অধীনে বিসিএসসহ বিভিন্ন
পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রার্থীদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ দূর করতে পরীক্ষা
পদ্ধতিতে সংস্কার আনার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে কী কী সংস্কার করা প্রয়োজন সে ধরনের পদক্ষেপ
নিতে অংশীজনদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছি। সেখানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থীদের বিপ্লবী
চেতনা ধারণ করে পিএসসিকে ঢেলে সাজাতে চাই। এক্ষেত্রে যোগ্য ও উপযুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগের
লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা কেমন কর্ম কমিশন চায় তাদের মতামতের আলোকে স্বপ্নের কর্ম কমিশন
গড়ে তোলা হবে। যেসব সংস্কার ও পরিবর্তনের মতামত শিক্ষার্থীরা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত
গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হবে এবং উপযুক্ত পরামর্শ বাস্তবায়ন করা হবে।