Logo
Logo
×

জাতীয়

মাদক নির্মূলে আলেমদের নিয়ে কমিশন গঠনের প্রস্তাব

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম

মাদকের কুফল ও প্রতিকারে ইমাম-খতিব, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন দেশের সচেতন আলেমরা। 

তারা বলেছেন, সরকার এই কমিশন গঠনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে মাদক বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এতে ইমাম-খতিব ও আলেম সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারকে সহযোগিতা করবে।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মাদানী মজলিস বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দেশ ও জাতির কল্যাণে মাদকের কুফল ও প্রতিকার’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় তারা সরকারের কাছে নয় দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেন, মাদক এখন সমাজে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মদ, হিরোইন, আফিমসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ইয়াবা সমাজের সব স্তরে পৌঁছে গেছে। ইয়াবা এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই জাতিই ক্রাস করবে। এই ইয়াবা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। 

গ্রাম ও শহরে ইয়াবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ জন্য তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের আলেম-উলামাদের সহযোগিতা কামনা করেন।

সেমিনারে আন্তর্জাতিক আলোচক ছিলেন ভারতের প্রখ্যাত আলেম আওলাদে রাসুল (সা.) সায়্যিদ আফফান মানসুরপুরী। তিনি ইসলামের প্রথম যুগে মদ কিভাবে ধাপে ধাপে হারাম করা হয় ও কুরআন শরীফে ও হাদিসে মদ এবং নেশা সম্পর্কে কি রয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দিদের মধ্যে ২৫ ভাগ মাদকাসক্ত। সমাজের অপরাধের একটি বড় অংশই মাদকাসক্ত বা মাদক সংশ্লিষ্ট। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার আসামিরা কারাগারে অতি কম সময় অবস্থান করেন ও মাদক মামলায় বারবার কারাগারে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তিনি এই প্রথমবারের মতো আলেম সমাজকে মাদক নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সেমিনারের প্রধান আলোচক মাদানী মজলিস বাংলাদেশ’র সভাপতি শায়খ মুফতি হাফীজুদ্দীন মাঠ পর্যায়ে মাদকের বিস্তার রোধে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। 

দাবিগুলো হলো- ইমাম-খতিব, জন-প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে সরকারি কমিশন গঠন করা। মাদকদ্রব্য উৎপাদন এবং চোরাচালানের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপে গ্রহণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখা। মদের নেশার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচারে শরিয়া আইনকে প্রাধান্য দেওয়া। অবৈধ বার এবং মাদকদ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা। বিদেশি অমুসলিম নাগরিকদের জন্য সরকারের লাইসেন্সধারী কোনো বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান শর্ত লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মদ বিক্রি করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্য জনসমক্ষে প্রকাশ্যে বিনষ্ট করা এবং আটক আসামিদের বিচারিক পদক্ষেপগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা। মাদকাসক্ত কয়েদিদের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য চিন্তাশীল আলেমদের পাক্ষিক কাউন্সিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

মুফতি হাফিজউদ্দীন বলেন, মাদকের মতো ভয়াবহ ব্যাধি থেকে দেশবাসী এবং বিশেষত নতুন প্রজন্মকে রক্ষা ও মুক্ত রাখার জন্য সরকার, সুশীল সচেতন নাগরিক এবং আলেম-উলামা, ইমাম-খতীব ও ধর্মীয় ব্যক্তিবৃন্দের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সুচিন্তিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মাঠপর্যায়ে কর্ম-তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়ার ভাইস-প্রিন্সিপাল শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুল গাফফার, গবেষক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক নদভী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক শায়খ মুসা আল হাফিজ, বিশিষ্ট শিল্পপতি ফারুক তালুকদার সোহেল, কমান্ডার (অব.) মাহবুবুর রহমান, কমিশনার (ইনকাম ট্যাক্স) মিজানুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মহিউদ্দিন চৌধুরী মোহন, ক্যাপ্টেন (অব.) এস. এম. হেলাল, সাংবাদিক মশিউর রহমান খান এবং শিল্পপতি গোলাম দস্তগীর বাবু।

সেমিনারে মাদকের কুফল ও প্রতিকার শিরোনামে একটি গবেষণা-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুফতি হাফীজুদ্দীন। এ সময় ‘মদ ও মাদকতা’ নামক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম