উপদেষ্টা পরিষদের ব্রিফিং
ঐক্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
![ঐক্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/01/15/Commission--Gov-py-6787e3187c62b.jpg)
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের বিচার সম্ভব। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদষ্টো পরিষদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়।
এ সময়ে বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন,
বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদষ্টো ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদষ্টো সৈয়দা রিজওয়ানা
হাসান এবং স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া উপদষ্টো আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। প্রধান উপদষ্টোর
প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিবেদনের কোথায়
কোথায় প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তা চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবার একটা প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে।
আর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টগুলো ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে আছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন, দুদক কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলো ১০ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করে। এর মধ্যে বিচার বিভাগ এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি ৪টি কমিশন, বুধবার প্রধান উপদষ্টোর কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছেন।
বুধবারের ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল
বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আসতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক
দলগুলোর সঙ্গে এসব প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনার ভিত্তিতেই সুপারিশ বাস্তবায়নের
পথে যাবে সরকার। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর।
আইন উপদষ্টো বলেন, রাজনৈতিক
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে নূ্যনতম সংস্কার, নাকি প্রত্যাশিত
মাত্রায় বিস্তৃত সংস্কার করা হবে। আর নূ্যনতম সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে তখন নূ্যনতম
সংস্কারের ক্ষেত্রে কোন কোন সুপারিশ প্রাধান্য পাবে, তা চিহ্নিত করা হবে। তবে তিনি
মনে করেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পুরো কাজটা অন্তর্বর্তী
সরকার সম্পন্ন করে যেতে পারবে।
আইন উপদষ্টো আসিফ নজরুল জানান,
কয়েকটি ধাপে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার আইন ও বিধি প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু হবে। এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার। আগামী
জাতীয় নির্বাচনের আগেই ট্রায়াল কোর্ট বা বিচারিক আদালতে এই বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা-নির্বাচনের আগে বিচার কাজ শেষ করতে
পারব। এখানে কারও কোনো গাফিলতি নেই। দেশে
যে নির্মম গণহত্যা চলেছে, অবশ্যই এর বিচার করা হবে।' আসিফ নজরুল বলেন, বিচারের কার্যক্রম
অত্যন্ত সাবলীলভাবে চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কাজটা বেশি।
সেজন্য আমরা এই বিষয়টা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যে গতিতে মামলার তদন্ত কাজ চলছে,
তাতে চলতি বছরের মার্চে শুনানি শুরু হবে বলে আশা করছি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজনৈতিক
দলের সঙ্গে যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে। তবে জুলাই গণ-অভু্যত্থানের
চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা যেন বাস্তবায়ন হয় সেদিকে সব অংশীজন গুরুত্ব দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ
করেন। তার মতে, সংস্কার কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার মধ্য
দিয়ে তাদের সঙ্গে একধরনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। প্রত্যেকটি কমিশন স্বাধীনভাবে
কাজ করেছে উলে্লখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আজ চারটি কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছে। অন্য
দুটি কমিশন বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিবেদনের কোথায় কোথায় প্রাধান্য দেওয়া উচিত,
সেটি চিহ্নিত করে আগামীকাল একটা প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টগুলো
৩১ জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচারে সরকারের অগ্রাধিকার
রয়েছে। একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারকাজ চলছে।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সব
অংশীজনের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদষ্টো আসিফ মাহমুদ
সজীব ভূইয়া বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা চিরতরে বিলুপ্ত করা জুলাই বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ
দিক। আশা করি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জুলাই অভু্যত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা
ছিল তা বাস্তবায়ন হবে।