প্রধান উপদেষ্টাকে ইয়ুথ ফোরামের খোলা চিঠি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।
গত ৬ জানুয়ারি এ চিঠি দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের এক ক্রান্তিকালে আপনি সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। দুই হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে এই দেশ ও জাতি দীর্ঘ দেড় দশকের জগদ্দল স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছে। সেই অভ্যুত্থান রক্ষার ঐতিহাসিক দায় ও দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে আপনার ওপর।
এতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানে যেসব বীর ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগ করেছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, পরিবার পরিজন হারিয়ে এতিম, বিধবা ও সন্তানহারা হয়েছেন তাদের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল এই দেশকে চিরতরে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করা। বিশেষত বিগত দেড় দশকে যারা ফ্যাসিবাদের রামরাজত্ব কায়েম করেছিল, তাদেরকে এই দেশের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিতাড়িত করা। কিন্তু আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সেক্টর থেকে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের এখনো মূলোৎপাটন করা যায়নি। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কুচক্রী মহলের চক্রান্তে অভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তিকে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের পাঁয়তারাও অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক শক্তিগুলোর মাঝে বিভেদ-বিভক্তি দিন দিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
চিঠিতে মুহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের সরকার ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, ইসকনের ছত্রছায়ায় সনাতন বিদ্রোহ, আমলা বিদ্রোহ, সর্বশেষ সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডসহ রাষ্ট্র ও প্রশাসনে ঘটে যাওয়া এসব ছোটবড় প্রতিটি ঘটনাই অভ্যুত্থানবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং অভ্যুত্থানে শহিদ, আহত ও স্বজনহারা ছাত্র জনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রস্তাবনাও দেন বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতি পক্ষাগুলোর মাঝে মৌলিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে জাতিগত ঐক্য নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সব সামরিক-বেসামরিক সেক্টর থেকে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের অতি দ্রুত অপসারণ করা। অতি দ্রুত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সব রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পাঁয়তারা বন্ধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিগত দেড় দশকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত সব গুম, খুন, বিচারিক হত্যার সঠিক তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। শেয়ারবাজার লুট, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচারসহ বিগত সরকারের আমলে সংগঠিত সব আর্থিক কেলেঙ্কারির সঠিক তদন্ত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের ওপর চালানো গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে আলাদা কমিশন গঠন করা।
চিঠিতে ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি আরও বলেন, দীর্ঘদিন যাবত দেশে ভোটের সংস্কৃতির অনুপস্থিতির ফলে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য মুখিয়ে আছে। অতএব মৌলিক ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।