Logo
Logo
×

জাতীয়

পাসপোর্ট বাতিল হলে কী হয়? কী কী কারণে সরকার পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

পাসপোর্ট বাতিল হলে কী হয়? কী কী কারণে সরকার পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে?

ছবি: সংগৃহীত

পাসপোর্ট এক ধরনের ভ্রমণ নথি, যা সাধারণত একটি দেশের সরকারকর্তৃক জারি করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় বাহকের জাতীয়তা ও পরিচয় প্রত্যয়িত করে। একটি পাসপোর্টে সাধারণত বাহকের নাম, জন্মের তারিখ ও স্থান, ছবি, স্বাক্ষর, এবং অন্যান্য চিহ্নিতকরণের তথ্য থাকে। পাসপোর্ট মূলত একটি দেশের ভ্রমণ বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

দেশের সংবিধান অনুযায়ী পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে যাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক, সরকার কখন বা কী কী কারণে পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে? পাসপোর্ট বাতিল হলেই বা কী হয়? এক্ষেত্রে যাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয় তাদের পরবর্তী করণীয় কী?

যেসব কারণে সরকার পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে

‘দ্য বাংলাদেশ পাসপোর্ট অর্ডার, ১৯৭৩’ অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট প্রদান, বাতিল এবং এ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকার এই অর্ডার অনুযায়ীই পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এই অর্ডারে যেসব কারণে পাসপোর্ট বাতিল করা যায় সে বিষয়ে বলা হয়েছে— ১. রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা অথবা দেশের নিরাপত্তা অথবা জনস্বার্থে বাতিল করা যাবে। 

২. নৈতিক স্খলনজনিত কারণে পাসপোর্টধারী ব্যক্তি দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হলে তার পাসপোর্টও বাতিল করতে পারে সরকার।

৩. দেশের যেকোনো আদালত পাসপোর্টধারী ব্যক্তির বিষয়ে আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা দেয় তবেও বাতিল হবে পাসপোর্ট।

৪. কেউ যদি তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট গ্রহণ করে তবে সরকার তা বাতিল করতে পারে।

৫. একজনের পাসপোর্ট আরেকজনের পজিশনে থাকলে অর্থাৎ রংফুল পজিশন হলে সরকারের তা বাতিল করার এখতিয়ার রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং জনস্বার্থে সরকার পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে। এই সেকশন অনুযায়ী সরকার তাদের পাসপোর্ট বাতিল করেছে বলে আমার মনে হয়।

তিনি বলছেন, যদি কেউ পাসপোর্ট আবার ফেরত পেতে চায় তবে তাকে ৯ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। বিচার বিশ্লেষণ করে সরকার তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেবে। এটাই আমাদের দেশের আইনি বিধান।

পাসপোর্ট বাতিল হলে কী হয়?

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ২২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার উপদেষ্টা, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ পদে থাকার কারণে যাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল তাদের নিয়োগ বা কর্মকাল শেষ হওয়ায় সেগুলো বাতিল করার একটি প্রজ্ঞাপন দেয়।

মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. কামরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন অন্তত দুটি তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের পাসপোর্ট দেওয়া যেতে পারে।

এরই মধ্যে মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গুম ও হত্যার সঙ্গে জড়িত ২২ জন এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এরকম ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।

আইনজীবী মনিরের ভাষ্য, পাসপোর্টের সঙ্গে শুধু ভ্রমণের মৌলিক অধিকার রয়েছে। অন্য কোনো সুযোগ সম্পর্কিত নয়। এই বিষয়টি তার অন্যান্য আর্থিক বা অন্য কোনো বিষয়কে প্রভাবিত করবে না।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, পাসপোর্টের সঙ্গে সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের বাইরে যাওয়া এবং পুনরায় দেশে প্রবেশ করা হলো মৌলিক অধিকার। এটা করার জন্য প্রয়োজন হয় ট্রাভেল ডকুমেন্ট।

তার কথায়, এর মধ্যে পাসপোর্ট হলো বাংলাদেশের জন্য পৃথিবীতে ভ্যালিড ট্রাভেল ডকুমেন্ট। এখন যদি এটা কারও না থাকে তবে সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বাইরে যাওয়া বা পুনরায় দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।

যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ বা মামলা আছে, বিচার চলছে, অনেক সময় তাদের পাসপোর্ট স্থগিত বা বাতিল করা হয়, যাতে তারা দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে। বিদেশে থাকলেও এটা করা হয়, যাতে তারা স্বাধীনভাবে পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে চলাচল করতে না পারে। তবে, তারা পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।

‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে দেশেই ফিরতে হবে’

ট্রাভেল ডকুমেন্টের ওপর ভিসা দেওয়া হয় না। বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেললে দেশে ফেরার জন্য এটি দেওয়া হয়।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) মাসুদ রেজোয়ান বলেন, ট্রাভেল ডকুমেন্ট হলো ব্যাক টু বাংলাদেশ। যদি আপনি বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন, বাংলাদেশে আসতে হবে আপনাকে। তখন সাময়িকভাবে দেশে ফেরার জন্য একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়। অন্যান্য দেশেও আছে এটা। সুতরাং তখন ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে দেশে আসতে হবে। সাধারণত বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে সাময়িক ভ্রমণ পত্র বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়।

তিনি বলছেন, দেশে ফিরে ওই ব্যক্তিকে পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে। অন্য দেশে যেতে ভিসা লাগবে। ট্রাভেল ডকুমেন্টের ওপর ভিসা হয় না। সুতরাং অন্য দেশে যেতে পারবে না। তবে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের ক্ষেত্রে ভারতের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়ার বিষয়টি 'স্পেশাল কেস' বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তার কথায়, ইন্ডিয়া স্পেশাল কেসে দিতে পারে। গভর্নমেন্ট লেভেলে যদি ডিসিশন হয় যে আমি ওই দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিল তাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেব। সেটা ভারতীয় সরকারকে অথোরাইজ করে দিতে হবে।

অনেক সময় যারা বিদেশে গিয়ে রাজনৈতিক বা শরণার্থী হিসাবে আশ্রয়ের আবেদন করেন, তাদের সেই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের চলাফেরার সুবিধার জন্য সেসব দেশ ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করে থাকে।

পাসপোর্ট বাতিল হলে করণীয় কী?

বর্তমান বিধি-বিধান অনুযায়ী একজন ব্যক্তি কেবল মাত্র একটি পাসপোর্ট নিতে পারেন। যাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হয়েছে তাদের সেটি জমা দিতে হবে। এরপর তারা আবার সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

দেশে থাকাবস্থায় পাসপোর্ট বাতিল হলে তা অধিদপ্তর বা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। অথবা আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবে।

রেজোয়ান জানান, ব্যক্তি যদি দেশে থাকেন তখন পাসপোর্ট বাতিল হলে নতুন করে আবেদন করতে হবে। আগেরটা তখন বন্ধ থাকে। তখন কেস করতে হবে। কেস করে আদালতের মাধ্যমে, রায়ের মাধ্যমে পেলে নিতে হবে।

এর আগে বিএনপির অনেক নেতার ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকে পাসপোর্ট না দিতে অধিদপ্তরকে চিঠি দিদেত বলে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন তারা আদালতে গিয়েছিলেন।

তিনি জানান, আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছিল। তখন ওনারা আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে এসে যখন কপি দিয়েছে তখন পাসপোর্ট দিতে বাধ্য হয়েছিল তখনকার সরকার।

তবে, দেশের বাইরে থাকাবস্থায় যদি কারো পাসপোর্ট বাতিল হয় তবে তাকে সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের অ্যাম্বাসিতে আগের পাসপোর্ট জমা দিয়ে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে বলে জানান তিনি।

জেনারেল (অব:) মাসুদ রেজোয়ান বলেন, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অ্যাম্বাসি যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। কারণ ই–পাসপোর্ট হওয়ায় সফটওয়ারের সিস্টেমেই পাসপোর্ট বাতিল যে করা হয়েছে সেটি সংযুক্ত থাকে, ফলে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম