জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের খসড়ায় যা আছে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সমুন্নত রাখতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবে। সেই ঘোষণাপত্রে পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, অভিপ্রায়, লক্ষ্য ও ইশতেহার লিপিবদ্ধ থাকার কথা জানা গেছে।
ইতোমধ্যে জুলাই
বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের খসড়ার একটি কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে। খসড়াটির সত্যতা নিশ্চিত
করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সমন্বয়ক।
তিনি জানান,
এটি ঘোষণাপত্রের খসড়া। সব দলের প্রতিনিধির
সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র প্রস্তত করা হবে। তাছাড়া ঘোষণাপত্রটি ৩১ ডিসেম্বর
ঘোষণার সময় মঞ্চে সব দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
খসড়ায় যা লেখা আছে
যেহেতু বাংলাদেশের
মানুষ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির জন্য ১৯৪৭ সাল যুদ্ধ করেছে, যেহেতু পাকিস্তান ১৯৭১
সালে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, যেহেতু ১৯৭২-এর সংবিধান আমাদের জাতির
আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, যেহেতু মার্শাল ল’ এবং সাংবিধানিক সংশোধনীসমূহ
ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রকে দুর্বলতম করেছে। এই উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক
প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ
রয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করার ক্ষেত্রে
অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে; পিলখানা, শাপলা চত্বর গণহত্যা, বিচার বিভাগীয় হত্যা,
সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে; ছাত্র-জনতা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে
উঠেছে; রাজাকারের নাতি হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করা
হয়েছে; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফ্যাসিস্ট শাসন দীর্ঘস্থায়ী কারার ক্ষেত্রে বেপরোয়া ভূমিকায়
অবতীর্ণ হয়েছে; ছাত্ররা ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেছিল, ইন্টারনেট বন্ধ করে কারফিউ জারি
করে ছাত্র-জনতার উচ্চকিত কণ্ঠ স্তিমিত করার চেষ্টা হয়েছিল; ছাত্র-জনতা অসহযোগ আন্দোলনের
ডাক দিয়েছিল; সব শ্রেণি-পেশার, ধর্ম, বর্ণ, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, ডান-বাম নির্বিশেষ ফ্যাসিজমের
বিরুদ্ধে অকল্পনীয় ঐক্য গড়ে তুলেছে, সেহেতু ছাত্র-জনতা ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছে এবং
সহস্রাধিক জীবন বিসর্জন দিয়েছে। সেই সঙ্গে আজও শত শত ছাত্র-জনতা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর,
সেজন্য আমরা নিজেদের স্বাধীন সার্বভৌম জনগণ হিসেবে ঘোষণা করলাম।
এর প্রেক্ষিতে...
আমরা পার্লামেন্ট
বিলুপ্তি চাই।
হাসিনা সরকারের
সময় নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে চাই।
আমরা ড. ইউনূসের
নেতৃত্বে একটা অন্তর্বর্তী সরকার চাই।
মিলিটারি শাসন
ও ১/১১ এর পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সেজন্য বেগম খালেদা জিয়ার তড়িৎ মুক্তি কামনা করছি।
আমরা ’৭২ এর
সংবিধান সংস্কার বা বাতিল চাই।
আমরা সব প্রতিষ্ঠানের
সংস্কার চাই।
আমরা গুম, খুন
ও গণহত্যার সুবিচার চাই।
অর্থপাচার,
পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার এবং পাচারকারী ব্যক্তিদের শাস্তি চাই।
আমরা নতুন রাজনৈতিক
বন্দোবস্ত চাই। ’৭২ এর বন্দোবস্ত বাতিল চাই।
১/১১ এর বন্দোবস্ত
বাতিল চাই।
আমরা একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (Democratic Republic) চাই, আমরা বৈষম্য চাই না।
এই ঘোষণা ৫
আগস্ট, ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে বলেও জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে রোববার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয়
নাগরিক কমিটির নেতারা ঘোষণাপত্র উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানিয়েছিলেন, ঘোষণাপত্রে
বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা
হবে।
এসময় রাজধানী ঢাকার বাংলামোটর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির
মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ প্রমুখ।