অপসাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ম্লান করে দিচ্ছে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ পিএম

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, দলবাজি, অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা এবং তথ্যসন্ত্রাস সাংবাদিকদের মর্যাদা ম্লান করে দিচ্ছে। বস্তুনিষ্ঠ, সৎ, নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রশ্নে কোনও আপোষ করা চলবে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বস্তুনির্ভর সাংবাদিকতাকে দখল করে নিয়েছে স্বার্থনির্ভর সাংবাদিকতা।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা আয়োজিত সাংবাদিক মহাসম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম নানা সংকটে আবর্তিত। এই সংকট তৈরি করেছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। বিগত ১৫ বছর এ দেশের গণমাধ্যম সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারে নি। এ দেশের গণমাধ্যম ফ্যাসিস্ট সরকারের খুন, গুম, লুটপাট, হত্যার তথ্য তুলে ধরতে পারে নি। বরাবরই স্বৈরশাসকরা গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে, যেন মানুষ তাদের দুঃশাসনের তথ্য জানতে না পারে। তাই অনেকে এখন গণমাধ্যমের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এটা আমাদের একটা দৈন্যতা।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকে সবসময় জনগণের পক্ষে থাকার কথা ছিল। কিন্তু কীভাবে জানি না জনগণের সঙ্গে গণমাধ্যমের একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের গালির তালিকায় আগে পুলিশ ও ডাক্তারের নাম থাকতো, এখন সাংবাদিকদের নামও থাকে।’
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন বলেন, দেশে প্রকৃত অর্থেই জনস্বার্থে সাংবাদিকতার সংকট রয়েছে এবং এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সংস্কার জরুরি। তিনি মনে করেন, দেশে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছে এবং এই আমলেই সাংবাদিকতার সংস্কার হওয়া উচিত।
বিএফইউজের সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল বলেন, সাংবাদিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদমাধ্যম যদি মালিকপক্ষের মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হয়ে থাকে তাহলে সাংবাদিকতায় সংস্কার সম্ভব নয়।
একইসঙ্গে নতুন গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে সারাদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সংবাদমাধ্যমে সংস্কারের তাগিদ জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার ১২ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কোনও বিচার পাইনি। যেহেতু ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই— অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, ঠিক একইভাবে আর কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে গিয়ে যেন কোনও সাংবাদিক আহত না হয় সেটাও চাই।
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি মমিনুর রশিদ শাইনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন— ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, শাহজান মোল্লা, আলমগীর গনি, খায়রুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রিন্স, জামাল হোসেন, আরিফুর রহমান আজাদ, হাসান সরকার জুয়েল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার মহাসচিব কামরুল ইসলাম।
গণ-অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পরেও সাংবাদিকতা সংস্কারে উদ্যোগ নেই জানিয়ে ক্ষোভ ও আক্ষেপ জানান তারা।