গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় কাজ করছে সেনাবাহিনী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পিএম
দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যাতে কেপিআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা-নাশকতা প্রতিরোধ, নিরাপত্তা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনশীল অবস্থায় থাকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাসদর আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান এসব কথা বলেন।
সচিবালয়ে আগুন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত করে সচিবালয়ের আগুনের পেছনের কারণ বলা যাবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই সেনাবাহিনীর দায়িত্বভুক্ত। যখন সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে, তখন থেকেই প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কেপিআই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি হুমকি পর্যালোচনা করা হয়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি সহজ নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি আছে। অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। সেনাবাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সরকারের সিদ্ধান্তেই সেনাবাহিনী প্রত্যাহার হবে। কতদিন দায়িত্ব পালন করবে, সে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে।
৫ আগস্টের পরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে অনেক ঘটনা ঘটছে। সেগুলো আমাদের নজরদারিতেও আছে। এটা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি। আমাদের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সমন্বয় সেল আছে। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয় করে।
তিনি বলেন, সেনা সদর পর্যায়ে এবং উপদেষ্টা পর্যায়েও সমন্বয় করা হয়। এছাড়া দেশে যত ধরনের আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত হুমকি উঠে আসে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে, তা ঠিক করা হয়। এভাবে অনেক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চাঁদাবাজির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে অবশ্যই প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারে নিরাপত্তাঝুঁকি আছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি এ মুহূর্তে নেই। সেনাবাহিনী সব সময় ওই এলাকায় সতর্ক অবস্থায় কাজ করছে। যদি কখনো ঝুঁকি আসে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত। তাছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি, কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য বাহিনী কাজ করছে।
বান্দরবানে ত্রিপুরাদের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনি বলেন, এটা জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হয়েছে। অন্য কোনো কারণ ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী অদ্যাবধি দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে ৩ হাজার ৫৮৯ জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহিদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন অসুস্থ হয়ে রংপুর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। তিনি বর্তমানে ঢাকা সিএমএইচের এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রেস ব্রিফিংয়ে। এতে বলা হয়, ২৮ নভেম্বরের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ২৮টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৪২৪টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
এ সময় দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৬৭টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভ‚ত ১৩ বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কারখানাগুলো চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৯৩টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে একটি ছাড়া সব কারখানাই চালু আছে। শিল্পাঞ্চল ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিগত এক মাসে ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয় দায়িত্ব পালন করছে।
এ সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে কর্মধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ।