সোনা বা স্বর্ণ একটি মূল্যবান ধাতু। জার্মানির বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ কার্ল মার্ক্স সোনাকে মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম ধাতু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সোনা অধিকারের জন্য অনেক জাতি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছে অগণিত মানুষ। আবার সোনার মালিক হয়েও তা হারানোর ভয়ে কেউ শান্তিতে থাকতে পারেনি।
মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরুর পর থেকেই খনি থেকে সোনা উত্তোলন করতে থাকে। তখন থেকেই অলঙ্কার তৈরিতে সোনা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম-সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিসে সোনার তৈরি টাকা প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে আর্মেনিয়ায় সোনার টাকা ব্যবহৃত হতো। ১৬০০ সালে রাশিয়ার খনি থেকে সোনা উত্তোলন শুরু হয়।
একটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সোনা। দেশীয় মুদ্রার ওঠানামা এবং আর্থিক সংকটের বিরুদ্ধে সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে সোনা।
সারা পৃথিবীতেই সোনার কদর রয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে সোনার গয়না পরার রীতি চলে আসছে। বিশ্ববাজারে সোনার ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে তা জমানোর প্রবণতা বেশ কয়েক দশক ধরে বেড়েই চলেছে।
দেশের মুদ্রার দর নিয়ন্ত্রণেও সোনার ভূমিকা রয়েছে। তাই বিশ্ববাজারে বাড়ছে সোনার চাহিদা ও দাম। অর্থনীতিতে যখন টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন সেই অস্থির পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে জমিয়ে রাখা সোনার হাতেই।
স্থানীয় মুদ্রার দর পড়লেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালাতে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, তাই নিজেদের রাজকোষে টন টন সোনা জমাচ্ছে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই।
সোনা জমানোর দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। কোন দেশের হাতে কী পরিমাণ সোনা জমা করে রাখা আছে, তার একটি তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল।
সোনা মজুতের দিক থেকে শীর্ষে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৮১৩৩.২৬ টন সোনা মজুত আছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের যে পরিমাণ সোনা মজুত করা রয়েছে, তার পরিমাণ ফ্রান্স, ইটালি এবং জার্মানির সম্মিলিত সম্পদের প্রায় সমান।
সোনা মজুতের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় পজিশনে আছে জার্মানি। তাদের হাতে ৩,৩৫৯.১ মেট্রিক টন সোনা সঞ্চিত রয়েছে।
জার্মানির বেশির ভাগ সোনা নিউইয়র্ক, লন্ডন এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে মজুত আছে। বর্তমানে জার্মানি বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
সোনা মজুতের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। তাদের কাছে সঞ্চিত সোনার পরিমাণ ২,৪৫১.৮ মেট্রিক টন।
অর্থনীতির দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম তালিকায় ফ্রান্স। সোনা জমানোর নিরিখে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চতুর্থ স্থানে থাকা ফ্রান্সের ‘গোল্ড রিজার্ভ’ প্রায় ২ হাজার ৪৩৬ টন।
গোল্ড রিজার্ভের দিক থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই এশিয়ার মহাশক্তিধর চীন। এ দেশে গোল্ড রিজার্ভের পরিমাণ রয়েছে ২২৬৪ টন। সুইৎজারল্যান্ডের হাতে রয়েছে ১০৩৯ টন সোনা।
এশিয়ার আরও একটি দেশ জাপানকে পেছনে ফেলে তালিকার সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে, সেটি হলো ভারত। অক্টোবরের শেষপর্যন্ত ভারতের হাতে মোট ৮৫৮.৩ টন সোনা মজুত রয়েছে।
সোনা মজুতের দিক থেকে ভারতের পর রয়েছে জাপান। জাপানের গোল্ড রিজার্ভ প্রায় ৮৪৫ টন। তালিকার নয় নম্বরে থাকা নেদারল্যান্ডসের কাছে সোনা রয়েছে প্রায় ৬১২ টন। দশ নম্বরে রয়েছে তুরস্ক। কামাল আতাতুর্কের হাতে মজুত রয়েছে ৫৯৫ টন সোনা।