‘জয় বাংলা স্লোগানকে সকলের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আওয়ামী লীগ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান করে সবার উপর জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান। বুধবার রাতে ফেসবুকে এক পোস্টে এ মত প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, হাসিনা রেজিমে অনেক ‘জাতীয় ইতরামি’ দেখা গেছে। ওরা বাঙ্গালকে
হাইকোর্ট দেখিয়ে এমন সব কাণ্ডকীর্তি করতো যেগুলোকে জাতীয় ইতরামিই বলতে হয়। আচ্ছা বলেন
দেখি ‘জাতীয় স্লোগান’ জিনিসটা কী? হাসিনা রেজিমে হাইকোর্টে ওদের অনুগত এক বিচারক জাজমেন্ট
দিয়ে দিল, এখন থেকে ‘জয় বাংলা’ হইলো গিয়া ‘জাতীয় স্লোগান’।
মারুফ কামাল খান আরও লিখেছেন, জয় বাংলা একটা রাজনৈতিক ধ্বনি। ছাত্রলীগ
পাকিস্তান আমলে এ স্লোগান চালু করে। পরে এটা জনপ্রিয় হলে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থক
অন্যান্য সংগঠনও এ স্লোগান গ্রহণ করে। কালক্রমে ‘জয় বাংলা’ হয়ে ওঠে স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীকার
ও স্বাধীনতার স্লোগান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ স্লোগানের প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা
ও সর্বজনীনতা হারায়। তবে আওয়ামী লীগ এ ধ্বনি আঁকড়ে রাখে।
এই জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ বা বাধ্যতামূলক কোনোটাই ছিল না বলে উল্লেখ
করে তিনি লিখেছেন, যাদের ইচ্ছা তারা এই ধ্বনি দিতে পারতো, যাদের ইচ্ছা করেনি তাদেরকে
দিতে হয়নি এ স্লোগান। এটাই ছিল খুব যৌক্তিক অবস্থান। কিন্তু ঐযে আওয়ামী খুচরা চালাকি!
তারা করল কি হাইকোর্টের অনুগত বিচারককে দিয়ে এক রায় দেওয়াল যে, জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান।
এভাবেই এই ধ্বনি দেওয়া সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হলো। কী একটা অবস্থা!
খালেদা জিয়ার সাবেক এই প্রেসসচিব লিখেছেন, সব কিছু চাপিয়ে দেওয়াই হচ্ছে আওয়ামী রাজনীতির কালচার৷ জয় বাংলা স্লোগানকেও সেভাবেই তারা সকলের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। আওয়ামী শাসনের অবসানের পর সেই জয় বাংলা চাপিয়ে দেওয়া রায় বাতিল করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এতে আবারো জয় বাংলা ধ্বনি দেওয়াটা বাধ্যতামূলক থেকে অপশোনাল হয়ে গেলো। ভালো হয়েছে। ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। ফের ফিরেছে যৌক্তিক অবস্থা। ফরমায়েশি আদালতের রায়ের ওপর আজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের কোথাও জাতীয় স্লোগান বলে কিছু নাই - ন্যাশনাল মটো আছে কোনো কোনো দেশে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা জয়যুক্ত হয়ে যাবার পর জয় বাংলা স্লোগান এখন আর্কাইভ বা যাদুঘরের বিষয়। জয় বাংলার স্থান এখন বর্তমানে নয়, ইতিহাসে। এটা আমার মত। এর বিপরীত মত যাদের, তারা জয় বাংলা বলে মুখে ফেনা তুলুন, কেউ আটকাবে না। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোথাও কোনো দল স্লোগানের আড়ালে হত্যাযজ্ঞ, নিপীড়ন, লুণ্ঠন চালায় না। চেতনা ও আবেগের ফেনায় চুরি ঢেকে রাখার অপচেষ্টা কেবল আওয়ামী লীগকেই করতে দেখি।
প্রসঙ্গত, ‘জয় বাংলা’ হবে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান—এমন ঘোষণাসংক্রান্ত
হাইকোর্টের রায় মঙ্গলবার স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের
করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে মঙ্গলবার এই আদেশ দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট ওই রায় দেন। রায়ে ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে এবং জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্লোগানটি উচ্চারণের জন্য পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়। ২০১৭ সালে ওই রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।