পোষ্য কোটা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে: সারজিস আলম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম
ফাইল ছবি
জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম দেশে বিদ্যমান পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি তুলেছেন।
শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন দাবি জানান।
পোস্টে সারজিস লিখেন, ‘পোষ্য কোটা’ নামক তেলা মাথায় তেল দেওয়া কালচার অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে ১৪ নভেম্বর তিন শিক্ষার্থী অনশনে বসেছিলেন। সে সময় তারা বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন থেকে শুরু করে তারা নানা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এরপরও তাদের সন্তানদের কেন পোষ্য কোটার প্রয়োজন হবে? দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের সন্তানদের কোনো কোটা নেই। তারা পোষ্য কোটা সংস্কার নয়, পুরোপুরি বাতিল চান।
এদিকে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। শুক্রবারও তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে ফেল করার পরও একজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
‘পাওয়ার অব পোষ্য কোটা’ শিরোনামে তিনি লেখেন, ‘ফেল করেও বিশেষ সুপারিশে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স পেয়েছিলেন আকসা আকতার নামের একজন পোষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থী। পরে তিনি এটাতেও স্যাটিসফাইড না হলে তার বাবা আবারও আবেদন করেন। এখন মার্কেটিং এ ২০১৯-২০ সেশনে অধ্যয়নরত আছেন। নূন্যতম পাশমার্ক না তুলেও একটা সাবজেক্ট পেয়ে আবার সেটা পছন্দ না হওয়ায় চেঞ্জ করতে পারতেছে। আর আমাদের (.২৫) এর জন্য বা সিরিয়াল ১ এর জন্য পছন্দের সাবজেক্ট তো দূরে থাক ওয়েটিং লিস্টে থাকে শত শত শিক্ষার্থী।’ এটা অবৈধ প্রক্সিকাণ্ডের থেকে কম কি?- প্রশ্ন তোলেন আম্মার।
আরেক পোস্টে আম্মার বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নকীবের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। অধ্যাপক নকীব উপাচার্য হওয়ার আগে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তোলা এই ছবিটি। এ ছবিতে কাফনের কাপড় পরে থাকা আম্মারের পাশে অধ্যাপক নকীবকে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। ছবির ক্যাপশনে আম্মার লেখেন, ‘ভিসি স্যার! মাত্র ৩ মাস আগের কথা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে। তখন আপনি আমার কাঁধে হাত রেখে আন্দোলন করেছেন। আজ আমার কাঁধ থেকে আপনার হাতটা সরে গেছে ঠিকই, কিন্তু আমি বিল্পবী রয়ে গেছি। শহিদের রক্তের ওপর দিয়ে এই কোটা থাকলে আমি এখনো স্বাধীন হতে পারিনি। তখন বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে যখন আন্দোলন বিক্রি করিনি আর এখন তো প্রশ্নই আসে না।’
সমন্বয়ক আম্মার বলেছেন, ১ শতাংশ কোটাও তারা মানবেন না। তিনি বলেন, আমরা কোনো কোটা মানব না। যদি মনে হয়, উপাচার্য আমাদের এই মুভমেন্টের সঙ্গে নেই তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেও আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে না। এই আন্দোলনে এবার প্রয়োজনে প্রথম প্রাণটা আমিই দিব। তাও পোষ্য কোটা বাতিল করে যাব।
পোষ্য কোটা আসলে কোনো কোটা নয়, চাকরির সুবিধা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের এমন দাবির বিষয়ে সমন্বয়ক আম্মার বলেন, এ রকম কোনো অ্যাক্ট আমাদের দেখাতে পারবে না। আসলে ১৯৭৭ সালে রাবির উৎকালীন উপাচার্য আব্দুল বারী তার ছেলেকে ভর্তির জন্য এই পোষ্য কোটা চালু করেছিলেন। পরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও রাবিকে দেখে এ কোটা চালু করে। এখন কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে দেশ সংস্কার হয়ে গেল আর পোষ্য কোটা থাকবে তা হবে না।
প্রসঙ্গত, চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন সারজিস। যে আন্দোলনে জনতার যোগদানে সরকার পতন হয়। ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।