অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে সংগঠনের আড়ালে সক্রিয় ফরওয়ার্ড পার্টি
ইমন রহমান
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে আরও চাপে ফেলতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে হাজারও মানুষ জড়ো করে বসে পড়ার পরিকল্পনা করে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।
পরিকল্পনার অংশ- বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ‘ভুঁইফোঁড়’ এ সংগঠনটি দেশের প্রায় সবকটি জেলা থেকে অন্তত এক হাজার বাস ভর্তি মানুষ নিয়ে সোমবার ভোররাত থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকেই তথ্য পাওয়ায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে আছেন মূল পরিকল্পনাকারী ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক আবম মোস্তফা আমীন ও অন্যতম সংগঠক মাহবুবুল আলম চৌধুরী। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসার পথে জেলা শহরগুলোতে গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে।
সূত্র বলছে, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের সংগঠনের আড়ালে এসব অপতৎপরতায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ফরওয়ার্ড পার্টি। এই পার্টিরও আহ্বায়ক মোস্তফা আমীন। এ পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলায় ৭ থকে ৮ জন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল এক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারের বেশি বাস ভরে লোক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। এর আগে ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’-এর ৫ টাকার ফরম পূরণ করে সদস্য করে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে। যারা বিনাসুদে ঋণের আশায় ঢাকা এসেছেন তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি এক হাজার করে টাকা নেয় প্রতিনিধিরা। এক প্রকার প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে চক্রটি। রাজধানীর ধানমন্ডি ২ নম্বর রোডে ১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয়তলায় অফিসও খুলে বসেছে তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর শাহবাগ দখল করে সেখানে বসে পড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। রাজধানীতে বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির নীলনকশা করেছিল। তবে আমাদের গোয়েন্দা সূত্র আগে থেকেই বিষয়টি জেনে যায়। রোববার রাতেই এদের মূল হোতা মোস্তফা আমীনকে হেফাজতে নিয়ে পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া হয়েছে।
চক্রটির বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা বেশির ভাগই এ চক্রের জেলা পর্যায়ের সক্রিয় প্রতিনিধি। একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বর্তমান সরকারকে চাপে ফেলার জন্য তারা ঢাকায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিল। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়ই এরা প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে। এ প্রতিনিধিরাই লোভ দেখিয়ে সহজ-সরল লোকদের নিয়ে ঢাকায় আসে। তবে মোস্তফা আমীনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করেছেন বলেও জানান এসআই মাহফুজুর রহমান।
রোববার রাত ১টার পর সারা দেশ থেকে বাস, পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করেন। পরে পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসা লোকজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। সোমবার সকাল ৭টার দিকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচণ্ড যানজট দেখা যায়। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দুপুর ১২টার পরও আট থেকে ১০টি বাসভর্তি মানুষ শাহবাগে আসে। তাদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে ১২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ১৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের কাজে বাধা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার গ্রেফতারদের মধ্যে ১৮ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আহ্বায়ক মোস্তফা আমীন পুলিশ হেফাজতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গ্রেফতার অন্যরা হলেন-অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান, ইসতিয়াক আহমেদ, মাহবুব আলম চৌধুরী, মেহেদী হাসান, রাহাত ইমাম নোমান, মাসুদ, ইব্রাহীম, আলেক ফরাজী, সাইফুল ইসলাম, আবু বক্কর, রিংকু, নিজাম উদ্দিন, হারুন, আফজাল মন্ডল, রহিম, নুরনবী, শহিদ ও কহিনুর আক্তার।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোস্তফা আমীনের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার নোয়াপুরে। এর আগেও তিনি ২০২৩ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমন একটি প্রোগ্রাম করেছিল। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া তার পেশা। এর আগেও তিনি আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা যুগান্তরকে বলেন, জনতুষ্টি মতোবাদের ওপর ভিত্তি করে তারা বিনাসুদে ঋণের কথা বলে শাহবাগে লোক জড়ো করার চেষ্টা করে। তাদের পেছনে আর কারা আছে তার তদন্ত চলছে।