কিরণের স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে ৩১২ বিঘা জমি, ৬০০ ভরি সোনা
টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) ও বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পিএম
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র (প্যানেল মেয়র) আসাদুর রহমান কিরণকে আটক করা হয়েছে। সোমবার রাতে যশোরের শার্শা সীমান্ত থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা তাকে আটক করে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হয়েই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, শার্শা উপজেলার শিকারপুর সীমান্ত দিয়ে কয়েকজন অবৈধপথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছে-এ ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাত ৩টার দিকে অভিযান চালানো হয়। এ সময় কিরণকে আটক করা হয়। শার্শার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নূর নবীর মাধ্যমে এক লাখ টাকার বিনিময়ে সীমান্ত অতিক্রম করার চুক্তি করেছিলেন কিরণ। তাকে শার্শা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির আব্বাস জানান, বিনা পাসপোর্টে ভারতে যাওয়াসংক্রান্ত আইনে কিরণের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় বহু মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গাজীপুর ও রাজধানীর উত্তরা থানায় একাধিক মামলার এজাহারে তার নাম রয়েছে। ২০২১ সালে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে কিরণকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিরণের বাবা নূর মোহাম্মদ ছিলেন স্কুলের দপ্তরি। কিরণ প্রথমে টঙ্গীর একটি কারখানায় শ্রমিক ছিলেন। শ্রমিক থেকে তিনি টঙ্গী পৌরসভার কমিশনার হন। এরপর তার ভাগ্য খুলে যায়। টাকা ও ক্ষমতার জোরে তিনি একাধিকার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে এক মেয়াদের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। নিউইয়র্ক শহরে তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি করে কিরণ মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে কিরণের রাজনীতির হাতেখড়ি। ২০০০ সালে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান দ্বিতীয় মেয়াদে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কিরণ রাতারাতি তার ঘনিষ্ঠজন হয়ে যান। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির দায়ে সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বরখাস্ত হলে কিরণ বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হয়েই কিরণ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। বিভিন্ন শিল্প-কারখানার হোল্ডিং ট্যাক্স জালিয়াতি করে কমিয়ে ও ঠিকাদারদের থেকে কমিশন বাণিজ্য করে কিরণ কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিরণ ও তার স্ত্রীর নামে নিউইয়র্ক শহরে তিনটি বাড়ি রয়েছে। উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০নং বাড়ি (৭ তলা আলিশান ভবন বর্তমান), উত্তরায় ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫নং ১২ তলা ভবন (নির্মাণাধীন)। রূপায়ণ সিটি উত্তরায় ম্যাজিস্ট্রিক ফেইস ৮ নম্বর বিল্ডিংয়ে ২টি লাক্সারিয়াস কন্ডোনিয়াম ফ্ল্যাট। ভালুকা উপজেলায় নিজের এবং তার স্ত্রীর নামে ২০০ বিঘা জমির ওপর ফ্যাক্টরি। রাজধানীর গুলশান-২, ৭৯ নম্বর রোডে ২৫০০ স্কয়ারফিটের আলিশান ফ্ল্যাট। টঙ্গী জোনে তার তিনটি ফ্যাক্টরি। টঙ্গীর পাগারে, আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রীর নামে শ্যালক এবং শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমি। টঙ্গীর পাগারে সংখ্যালঘুদের জমি ও মরকুন কবরস্থান জায়গা দখলেরও অভিযোগ রয়েছে কিরণের বিরুদ্ধে। প্রথম মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে দুর্নীতি করে পাচার করা টাকায় তিনি নিউইয়র্ক শহরে তিনটি বাড়ি করেন। বিভিন্ন ব্যাংকের লকারে তার রক্ষিত ৫০০-৬০০ ভরি স্বর্ণ ও ডায়মন্ড।