ফাইল ছবি
মানুষের জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়েছে রেলের ১৫১৯ জন গেটকিপারের চাকরি। দুটি পৃথক প্রকল্পের আওতায় তারা এতদিন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হলেও এখন শুধু এই কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এতে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করলেও গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে এ প্রস্তাবে সুপারিশ দিতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বিশেষ বিবেচনায় প্রকল্পের মেয়াদ ও জনবল খাতের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ শেষবারের মতো বাড়ানো যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে আর কোনোভাবেই প্রকল্প দুটি সম্প্রসারণের সুযোগ নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেলক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’ এবং ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেলক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’ প্রকল্প দুটির আওতায় এসব গেটকিপার কাজ করছেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প দুটির সংশোধনী প্রস্তাব আসার পর ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে বলা হয়, এই কাজ আরও আগেই করা উচিত ছিল। কিন্তু এটা না করাটা ঠিক হয়নি।
সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেলক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে মূল মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়াদ বেড়ে হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায় অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত আছেন ৭৬৬ জন গেটকিপার। এখন প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পটি চতুর্থ সংশোধনীর কারণ জানতে চাওয়া হয়। এ সময় প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ভৌত কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা লেভেলক্রসিং গেটে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত গেটকিপারদের পদ স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এক্ষেত্রে প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে। তাই কর্মরতদের বেতন-ভাতা সংস্থান রেখে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পর্যায়ে সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান গেটকিপারদের চাকরি স্থায়ীকরণের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ৪ নভেম্বর উল্লিখিত নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ সম্পর্কে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রজ্ঞাপনে কিছু সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিধিমালাটি সংশোধন ও প্রতিস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের পরামর্শ নেওয়া হয়। এখন প্রস্তাবটি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সম্মতির জন্য পাঠানোর অপেক্ষায় আছে। মূলত গেটকিপারদের পদ রাজস্ব খাতে নিতে সব প্রক্রিয়াকরণের ধাপ পার হতে এক বছর সময় প্রয়োজন হবে।
সভাসূত্র জানায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের বক্তব্যের পর সভার সভাপতি সোলেমান খান উষ্মা প্রকাশ করেন ও এটি উচিত নয় বলে জানান। এ পর্যায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি প্রকল্পটির সংশোধনের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তবে সভাপতি বলেন, লেভেলক্রসিং গেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণে গেট কিপারদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেই সঙ্গে তাদের বেতন-ভাতাদি দেওয়া প্রয়োজন। এসব বিবেচনা করে প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কবির আহমদ বলেন, গেটকিপারদের চাকরি জাতীয়করণের বিষয়টি এতদিন নিষ্পত্তি হওয়া উচিত ছিল। তবে শেষবারের মতো এবার প্রকল্পের মেয়াদ ও জনবলের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করা যেতে পারে।
এদিকে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেলক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পরে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এখন ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ১৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করে তৃতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গেটকিপার হিসাবে কর্মরত আছেন ৭৫৩ জন। এক্ষেত্রেও পিইসি সভায় একই রকম মন্তব্য করা হয়েছে।