হাত হারানো শিশু শ্রমিক নাঈমকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার রায় বহাল
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় হাত হারানো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিশু নাঈম হাসানকে ৩০ লাখ টাকা দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারখানা মালিক হাজী ইয়াকুব হোসেনের করা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত দেন।
শিশু নাঈমের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সামর্থ্য থাকার পরও ওই কারখানা মালিক নানা ছলচাতুরিতে নাঈমকে পাওনা থেকে বঞ্চিত করে আদালতের রায় অমান্য করে চলেছেন।
এই আপিল ‘ডিসমিসের’ পর আশা করি, ইয়াকুব আর ছলচাতুরি করবেন না, মানবিক হয়ে তার পাওনা পরিশোধ করবেন।
২০২০ সালের ১ নভেম্বর ‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ডিসেম্বরে নাঈমের বাবা আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর রুল দেন আদালত। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ রায় দেন।
রায়ে নাঈম হাসানের নামে ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত করে দিতে কারখানা মালিককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে শিশুটি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ না করা পর্যন্ত তাকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নূর ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ওই ওয়ার্কশপের মালিক হাজী ইয়াকুব হোসেনকে।
চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নাঈম আমানতের ওই টাকা ১০ বছর পর তুলতে পারবে বলে রায়ে সিদ্ধান্ত দেন আদালত।
এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান ইয়াকুব হোসেন; কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখেন।
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষদিকে নাঈম হাসানের বয়স ছিল ১০ বছর; তখন সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে তার বাড়ি। বাবা আনোয়ার হোসেনের জুতার ব্যবসা ছিল।
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর সময়ে আনোয়ার কর্মহীন হয়ে পড়লে নাঈমকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ওই ওয়ার্কশপে কাজে দেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই একদিন তার ডান হাত মেশিনে ঢুকে যায়; পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে হাতটির নিচের অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়।