অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পিএম
তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) তিন দফায় ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে। এ তালিকায় অনেক পেশাদার ও সক্রিয় সাংবাদিক এবং সম্পাদকের নামও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা অধিকার গোষ্ঠী রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এক বিবৃতিতে বলেছে, সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ‘স্ব আরোপিত সেন্সরশিপকে উৎসাহিত করে’। এ বিষয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস আরও বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলাগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করার মাত্র এক সপ্তাহ পর এই উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি তাদের কাছে ‘বোধগম্য’ নয়।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রত্যাহারের পাশাপাশি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে হুমকি ও হামলার অন্য বিষয়গুলোকে ‘গণবিরোধী কর্তৃত্ববাদী শাসন’র নির্দেশক বলে অভিহিত করেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগস্টে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মুক্ত সংবাদপত্র সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেছে। দেশের একটি প্রথম সারির দৈনিককে গত মাসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, আপনারা যেমন খুশি লিখুন, সমালোচনা করুন। আপনারা না লিখলে আমরা কী করে বুঝব যে, কী হচ্ছে আর কী হচ্ছে না?
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত সহিংসতার অভিযোগে হাসিনাপন্থি হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিসহ অন্তত ২৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে, আগস্টে দুই সাংবাদিক গ্রেফতার হওয়ার নিন্দা জানিয়েছিল মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি বলেছিল, বিচার ব্যবস্থা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই ‘অপমানজনক ও পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিলিপি করছে’ ও ‘এ ক্ষেত্রে শুধু লক্ষ্যবস্তুরা বদলে গেছে।’
এর আগে, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ বলেছিল, সম্পাদক পরিষদ মনে করে, অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের কোনো অপব্যবহার হলে তা রিভিউ করার অধিকার তথ্য মন্ত্রণালয় রাখে। তবে এভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ ছাড়াই ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের অন্তরায়। এর মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমে সেন্সরশিপসহ নিয়ন্ত্রণবাদী পরিবেশ তৈরির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, যা জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মূল চেতনারও পরিপন্থি। বিষয়টিকে বিগত অতি নিয়ন্ত্রণবাদী কাঠামোর অগণতান্ত্রিক চর্চারই পুনরাবৃত্তি হিসাবে দেখছে সম্পাদক পরিষদ।