সরকারি হজ প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান এজেন্সি মালিকদের

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পিএম

সরকার ঘোষিত হজপ্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে প্রায় সোয়া লাখ টাকা বেশি নির্ধারণ করে নতুন হজপ্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকরা।
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে ‘বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ২০২৫ ঘোষণা’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পালটা এই প্যাকেজ ঘোষণা করেন তারা।
২০২৫ সালে হজে যেতে সরকার ঘোষিত দুটি ও বেসরকারি একটি প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে একটি প্যাকেজে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা ও আরেকটি প্যাকেজে ৪৫ হাজার টাকা যোগ করে নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
ওই হিসেবে ‘সাধারণ প্যাকেজ’ ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা আর ‘বিশেষ প্যাকেজ’ ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ঘোষণা করেছে।
গত বছরের চেয়ে ১ লাখ টাকার বেশি খরচ কমিয়ে আগামী বছরের জন্য পবিত্র হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানে ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ-১’ ও ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ-২’ নামের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এই হজ প্যাকেজগুলোর মূল্য ধরা হয় যথাক্রমে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। কিন্তু সরকারের এই হজের প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মালিকরা জানান, সরকার যে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এতে হাজিদের খরচ কমবে না; বরং বাড়বে। উল্টো ভোগান্তিতে পড়বেন তারা। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা আমরা হজ প্যাকেজ ঘোষণা করছি।
হাবের সাবেক মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার বলেন, হাজিদের সুবিধার্থে আমরা দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এরমধ্যে একটি থাকবে সাধারণ প্যাকেজ অন্যটি বিশেষ প্যাকেজ। দুটি প্যাকেজে সরকার ঘোষিত প্যাকেজের চেয়ে একটু বেশি মূল্য ধরা হয়েছে। তবে আমাদের প্যাকেজে সেবার মান উন্নত করা হয়েছে। সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এই প্যাকেজটির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি হাজি পবিত্র হজ পালন করতে যায়। সবার সামর্থ্যের মধ্যে রেখেই এ প্যাকেজটি মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ৩৬৩ টাকা।
সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার ৩২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে ধরে এ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্যাকেজে সৌদি অংশের খরচ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।এরমধ্যে থাকবে মক্কা মদিনা বাসা ভাড়া, জমজম পানি, সাভির্স চাজ, খাওয়া খরচ ইত্যাদি। আর বাংলাদেশ অংশের খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে রয়েছে বিমান ভাড়া ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল, প্রশিক্ষণ ফি, হজ গাইড ফি ইত্যাদি।
তিনি আরও জানান, সাধারণ প্যাকেজে থাকবে–– হজ ভিসা ও সৌদি আরবে যাওয়া-আসার বিমান টিকিট সরবরাহ, মক্কায় মসজিদুল হারামের বাইরের চত্বর থেকে সর্বোচ্চ ৩ কিলোমিটার এবং মদিনায় মসজিদে নববী থেকে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটারের মধ্যে মারকাজিয়া এরিয়ার বাহিরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল বা বাড়ি। প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসন; মিনায় তাঁবুতে ম্যাট্রেস, চাদর, কম্বল ও বালিশ এর ব্যবস্থা; আরাফায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুর ব্যবস্থা; মিনা ও আরাফায় মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার পরিবেশন; মক্কা-মিনা-আরাফা-মুজদালিফায় যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা; হজযাত্রী ও গাইডদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ; হজ ও ওমরাহ নির্দেশিকা, আইডি কার্ড ও লাগেজ ট্যাগ সরবরাহ; দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে হজযাত্রীকে ৫ লিটার জমজম পানি সরবরাহ।
কম-বেশি ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য ১ জন গাইড থাকবে এবং এজেন্সির সঙ্গে আলোচনা করে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে রুম আপগ্রেডেশন করা যাবে।
হজযাত্রীকে কোরবানি বাবদ আনুমানিক ৭৫০ সৌদি রিয়াল সঙ্গে নিতে হবে এবং কোরবানি নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হবে। সৌদি আরবে সর্বনিম্ন ৩০ দিন ও সর্বোচ্চ ৪৮ দিন অবস্থান করা যাবে। মদিনায় ৫ থেকে ৮ দিন অবস্থান করা যাবে। মুজদালিফায় নিজ ব্যবস্থাপনায় অবস্থান করতে হবে।
নিয়মিত সেবন করতে হয় এমন ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী (ব্লাড সুগার টেস্টের স্ট্রিপ, নিডল, ইনসুলিন, ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ) চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ কমপক্ষে ৫০ দিনের ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কোনও এয়ারলাইন্স এ বছর ডেডিকেটেড ফ্লাইট ছাড়া শিডিউল ফ্লাইটে কোনও হজযাত্রী বহন করতে পারবে না। প্যাকেজ ঘোষণার পর সৌদি সরকার কোনও খাতে খরচ বাড়ালে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে পরিশোধ করতে হবে।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজযাত্রী নূন্যতম ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। হজ প্যাকেজের বাকি টাকা আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবশ্যই স্ব স্ব এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে বা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে মানি রিসিট গ্রহণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কোনও লেনদেন করা যাবে না।
এ বছর ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরাও হজে যেতে পারবেন।