বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহতের ঘোষণা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম
ছবি: যুগান্তর
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তারা বলছে, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নানা কলাকৌশলে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা বন্দর নিয়ে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বন্দরকে রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতাও চান নেতারা।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এমনটাই জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুবিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেবার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ‘দেশ বাঁচাও, বন্দর বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম।
মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, কল্যাণ পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, বিএলডিপির যুগ্ম মহাসচিব এম এ বাশাার, গণঅধিকারে শহিদুল ইসলাম ফাহিম, শ্রমিক নেতা মো. বাহার মিয়া প্রমুখ।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের তৎপরতা চলছে। নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন করা হচ্ছে। যারা এই কনটেইনার টার্মিনালের দায়িত্বে আছেন তারা রাষ্ট্রকেও বড় সংখ্যক রাজস্ব দিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
ষড়যন্ত্র বন্ধের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহণ উপদেষ্টাকে আগামী ৭২ ঘন্টার আরটিমেটাম দিয়ে সাইফুল হক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে বিদেশি ডুবাই ভিত্তিক কোম্পানিকে দেওয়ার যে তৎপরতা, তা আপনি স্থগিত করবেন। তারপর দেশীয় ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন, চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। কীভাবে আমরা আমাদের কোম্পানির মধ্য দিয়ে বন্দরের গতি সঞ্চার করতে পারি তা আলোচনা করবেন।
তিনি বলেন, ৫৪ বছর পরও একটা জাতি রাষ্ট্র নিজেদের বন্দর যদি নিজেরা চালাতে না পারে এটা আমাদের জন্য লজ্জার ও অপমানের। অদক্ষতার কথা বলে কোনো অজুহাতে চট্টগ্রাম বন্দরকে কোনোভাবেই অন্য কারও হাতে জিম্মি করতে আমরা দিব না। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। প্রয়োজনে ঢাকা- চট্টগ্রামে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন মিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের অর্থনীতির লাইফ লাইন। আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে দেশীয় কোম্পানিগুলো এই বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। এর সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতি ও হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান যুক্ত। আমরা কোনোভাবেই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, যাতে চট্টগ্রাম বন্দর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এর আগে ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের সময় ডুবাই ভিত্তিক একটা কোম্পানির সঙ্গে একটা সমঝোতা স্মারক তৈরি করা হয়েছে। এখনো কোনো চুক্তি হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহণ উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে পারি না। লিজ দিতে পারি না। আপনারা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা সরকারকে বিতর্কিত করবে। যেটা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বাংলাদেশের জনগণ ও গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার কাছে আপনাদের দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু কোনো বিদেশি কোম্পানি, সংস্থা কিংবা স্বার্থের কাছে আপনাদের মাথা নত করার কোনো সুযোগ নাই।
গত ১৫ বছর বাংলাদেশকে ভারতের শেয়ার হোল্ডার হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে ভারতের চাওয়া অনুযায়ী বাংলাদেশে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হতো। সেই জায়গা থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে।
নুরুল হক নুর বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো একটা বিষয় নিয়ে রাজপথে নেমে কথা বলতে হবে এটা আমরা আশা করিনি। এখনো দেশীয় কোম্পানি বন্দর পরিচালনা করছে, সেখানে নতুন করে কেন বিদেশি কোম্পানিকে নিয়ে আসতে হবে। এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয় আছে। নৌ পরিবহণ উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের ও জাতীয় স্বার্থে বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্ধক দেওয়ার অপতৎপরতা বন্ধ করুন। দেশীয় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিন। অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। অন্যত্থাণ দেশের জনগণ আবারও রাজপথ নামবে।