বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনকারীদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রথমে পুলিশ সদস্যদের তালিকা করা হচ্ছে। এ কারণে আন্দোলনের সময় ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের মাঝে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুধু পুলিশই নয়, আন্দোলন দমনের চেষ্টারত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের তালিকাও প্রস্তুত করা হবে। তদন্ত শেষে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী বিচার করা হবে।
পুলিশ সদস্যদের তথ্য চেয়ে তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশের আট বিভাগের কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ ও ইউনিটের জন্য ইস্যু করা সিসির (কমান্ড সার্টিফিকেট) সত্যায়িত অনুলিপি চাওয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থা মনে করছে-সিসির অনুলিপি পর্যালোচনা করলে আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র এবং কতগুলো গুলি ব্যবহার করা হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়ক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাজহারুল হক যুগান্তরকে বলেন, জুলাই-আগস্টে গণহত্যাসহ যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেসব অপরাধ তদন্ত করতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের লক্ষ্যে শুধু পুলিশই নয়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়ক মাজহারুল হক স্বাক্ষরিত দুটি চিঠি পুলিশ বিভাগে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে ৬ অক্টোবর একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ৯ অক্টোবর দেশের আটটি মেট্রোপলিটনের কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৬ অক্টোবরের চিঠিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে বিভিন্ন অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের নামের তালিকাও চাওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৯ অক্টোবরের চিঠিতে তদন্ত সংস্থা আট মহানগর পুলিশের অপরাধ ও অপারেশন বিভাগের কাঠামো এবং ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মোতায়েন ফোর্সদের নাম-পদবি চেয়েছে। এ সময় দায়িত্বে থাকা সব থানার ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত), পরিদর্শক (অপারেশন) এবং ডিবিতে কর্মরত এসআই থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের ব্যালিস্টিক প্রতিবেদন দিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ডিএমপির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, ১৮-১৯ জুলাই এবং ৩-৫ আগস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ ও ইউনিটের জন্য ইস্যু করা সিসির (কমান্ড সার্টিফিকেট) সত্যায়িত অনুলিপিও চাওয়া হয়েছে। সিসিতে পুলিশ সদস্যদের নাম, পদবি, দায়িত্বের সময়, দায়িত্বের উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব এলাকার তথ্য থাকে। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালনের সময় বাহিনী সদস্যরা কতগুলো আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও অন্য সব সরঞ্জাম নিয়ে যায় সেই তথ্যও থাকে।
এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে চিঠি পাওয়ার পর থেকে তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একজন উপকমিশনার যুগান্তরকে বলেন, ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে সব চাহিদা জানিয়ে তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি।
এদিকে পুলিশ সদস্যদের তালিকা তৈরির কাজ শুরুর পর থেকে আন্দোলনের সময় ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। একাধিক পুলিশ সদস্য শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, চাকরিতে তারা মূলত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কমান্ড ফলো করেছেন। আন্দোলনের সময় দায়িত্বপালন করতে গিয়ে এখন আবার মামলা-মোকদ্দমায় ফেঁসে যান কি না এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ তালিকা পুলিশের মনোবলে প্রভাব ফেলবে। সিসি বিশ্লেষণ করলে অনেক পুলিশ সদস্যই ফেঁসে যেতে পারেন। এ তালিকা তাদের মনোবল আরও ভেঙে দেবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।