Logo
Logo
×

জাতীয়

পূজায় সরকারি বরাদ্দের চাল কালোবাজারে বিক্রি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম

পূজায় সরকারি বরাদ্দের চাল কালোবাজারে বিক্রি

পুরনো ছবি

দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা মণ্ডপ অনুসারে সারা দেশে চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারের বরাদ্দ দেওয়া এসব চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি পূজা মণ্ডপ না থাকলেও ভুয়া কাগজ দেখিয়ে চাল উত্তোলনের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

আমাদের গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দুলাল রায় দুলুর বিরুদ্ধে পূজামণ্ডপের ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ২ মেট্রিকটন সরকারি চাল উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে তার বরাদ্দের সরকারি চাল বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কালোবাজারে কম দরে বিক্রির অভিযোগ উঠে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক কার্ড তৈরি এবং পিআইও অফিস খরচের নামে চার লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

এসব অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে উপজেলা দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির চার সদস্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। 

বিষয়টি পূজা উদযাপন কমিটির পদত্যাগকারী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রেমানন্দ ঘরামী নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, উপজেলার ৮৫টি পূজামণ্ডপে সরকারিভাবে সাড়ে ৪২ মেট্রিকটন চাল বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫শ কেজি চাল বরাদ্দ পায়। কিন্তু সিন্ডিকেটের মধ্যমে বরাদ্দের ৫শ কেজি চাল ৩৮ টাকা দরে মোট ১৯ হাজার টাকায় কালোবাজারে বিক্রি করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দুলাল রায় দুলু।

এ বছর তালিকা অনুযায়ী গৌরনদীতে ৮৫টি মণ্ডপেপূজা উদযাপন করার কথা উল্লেখ থাকলেও বড় কসবা পালপাড়া এলাকায় মৃত কার্তিক পালের বাড়ি দুর্গাপূজা মন্দির, আধুনা গ্রামে রানু ভট্টাচার্যের বাড়ি পূজামণ্ডপ ও মেদাকুল গ্রামে ভূইয়া বাড়ি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। মেদাকুল গ্রামের বলরাম পোদ্দারের বাড়ির মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হলেও তারা কোন বছরই সরকারি অনুদান গ্রহণ করে না। সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা ও কমিটির সভাপতি দুলু রায়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি কারণে তিনিসহ কমিটির সহসভাপতি সুজিত চন্দ্র বাড়ৈ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল হালদার, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক অশোক গোস্বামী পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দুলাল রায় দুলু বলেন, পূজা কমিটির একটা খরচ আছে। স্বেচ্ছাসেবীদের কার্ড বাবদ ৫শ টাকা কেটে নেওয়া হলে তখন সবাই সাংবাদিকদের জানায়। তাছাড়া পূজা মণ্ডপের সভাপতি/সম্পাদকদের সর্বসম্মতিক্রমে বরাদ্দকৃত সরকারি চাল বিক্রি করা হয়েছে। আগৈলঝাড়ায় প্রতি মণ্ডপে ১৮ হাজার করে টাকা করে দিয়েছে, আর গৌরনদীতে চাল বিক্রি করে প্রত্যক মণ্ডপে ১৮ হাজার ৫শ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় থাকার কারণে আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ শিহাব উদ্দীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কে বা কারা চাল বিক্রি করেছেন বা কিনেছেন আমি এব্যাপারে কিছুই জানি না।

অপরদিকে ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ঢাকার ধামরাইয়ের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে পূজারী, দর্শনার্থী ও ভক্তানুরাগীদের আপ্যায়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে ধামরাই উপজেলার ১৯৬টি পূজামণ্ডপের জন্য ৯৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সরকারি বরাদ্দের এই চাল কালোবাজারে বিক্রির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ১৯৬টি পূজামণ্ডপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। বরাদ্দের চাল অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য ব্যবহার না করে তা বিক্রি করা হয়েছে পানির দামে। এই কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছেন খাদ্যগুদাম কর্মকর্তারাও। প্রতি বছরই দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মণ্ডপে-মণ্ডপে বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

ধামরাইয়ের একটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সরকারি বরাদ্দের চাল পূজামণ্ডপগুলোতে পৌঁছে দেওয়া কিংবা তদারকি করার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। এ সুযোগে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকরা খুবই কম দামে এসব চাল বিক্রি করছেন। ডেলিভারি অর্ডার দেওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন শেষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি পূজামণ্ডপে বরাদ্দ দেওয়া ৫০০ কেজি চালের মূল্য কমপক্ষে ২৫ হাজার ৯০০ টাকা। কিন্তু ৫০০ কেজি চাল ১৮ হাজার টাকায় অর্থাৎ ৩৩ টাকা দরে কিনে নিচ্ছে কালোবাজারিরা। চাল বিক্রি করে দেওয়ায় সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য নস্যাৎ হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে মন্দির কমিটির কাছ থেকে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) কিনে নিচ্ছেন বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম মাস্টার।

সাহা বেলিশ্বর সার্বজনীন পূজামণ্ডপের সভাপতি রতন কুমার চৌধুরী কর্মকার বৃহস্পতিবার সকালে ধামরাই উপজেলা খাদ্যগুদামের সামনে থেকেই ১৮ হাজার টাকায় চাল বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ওইগুলো মোটা চাল, খাওয়া যায় না। তাই বিক্রি করেছি। শুধু আমি নই, সবাই বিক্রি করছে।

এত কম দামে বিক্রি করলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ১৯ হাজার টাকা দাবি করেছিলাম, তাও দেয়নি। ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।

গাঙ্গুটিয়া রায় বাড়ি সার্বজনীন দুর্গামন্দির কমিটির সভাপতি মিলন কান্তি রায় বলেন, আমরা ১৮ হাজার টাকায় চাল বিক্রি করেছি। ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম মাস্টার বলেন, আমি ন্যায্য দাম দিয়েই চাল কিনেছি। কাউকে জোর কিংবা হুমকি দিয়ে নয়।

ধামরাই উপজেলা এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেয়ামত করিম বলেন, আমার এখান থেকে চাল কেনাবেচার সুযোগ নেই। যার নামে ডিও তাকেই চাল দেওয়া হবে। তিনি বাইরে গিয়ে ওই চাল কী করবেন তা আমার দেখা বা জানার বিষয় নয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম