নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বৈঠক
স্টেকহোল্ডারদের মতামতের পর চূড়ান্ত সুপারিশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
রাজনৈতিক দলসহ স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সুপারিশ আহ্বান করতে পারে কমিশন। সুপারিশ দিতে তিন মাস সময় বেঁধে দেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন। বুধবার নির্বাচন ভবনে ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’-এর বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সবার মতামত নেব। তবে তাদের সঙ্গে সংলাপ করব, নাকি অনলাইন বা ইমেইলে নেব সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে সবার মতামত নেব এটা মোটামুটি চূড়ান্ত বলা হয়। রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলাদা আলাদা সংলাপ করবেন কিনা জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহেমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ করে আপনাদের (নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের) সঙ্গে আলাদা করে বসব। সংলাপের চেয়ে সুপারিশ তৈরি করা আমাদের কাজ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারই ডায়লগ করবে। আমরা তো নির্বাচন কমিশন নই। নির্বাচন কমিশনকে সরকার কিভাবে চায় বা করতে পারেন সেই মতামতটা দেব। পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে বড় ধরনের সংলাপ করতে পারব বলে মনে হয় না।
বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ করতে এ কমিশন গঠন করা হয়। গতকাল নির্বাচন ভবনে সংস্কার কমিশনের সাত সদস্য বৈঠকে বসেন। বাকি একজন ছাত্র প্রতিনিধি এখনো নির্ধারণ হয়নি। তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনবিষয়ক আইন আরপিও, নির্বাচন বিধিমালা, স্থানীয় সরকারের আইন ও বিধি এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া বৈঠকে কোন আইন ও বিধিমালা নিয়ে কবে আলোচনা করা হবে তার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেছি। একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির চেষ্টা করছি, যাতে এগুলো নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারি। বৈঠকের আগে তিনি বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংবিধান যুক্ত আছে। অনেক আইন যুক্ত আছে। বিধিবিধান যুক্ত আছে। সংবিধানে যেসব নির্বাচনসংক্রান্ত বিধি-বিধান আছে সেগুলো পর্যালোচনা করব। জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত সবচেয়ে বড় আইন আরপিও। অনেক আইন-বিধি পর্যালোচনা করব। প্রত্যেক বাক্য আমরা পর্যালোচনা করব। ওখানে কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধন দরকার কিনা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব।
কিছু প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে কার্যকর করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করব। আমাদের আপনাদের অভিজ্ঞা নিয়ে সুপারিশ করার চেষ্টা করব। নির্বাচনের বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এসব বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে এ সম্পর্কে সুপারিশ দেওয়ার চেষ্টা করব। বড় ইস্যু প্রবাসীদের ভোটের অধিকার আর অধিকারহীনতা। কী করা যায়-এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। নির্বাচন ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যে সংরক্ষিত আসন আছে। স্থানীয় সরকারে যে সংরক্ষিত আসন-এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করব।
অতীতের নির্বাচন খতিয়ে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের কিছু অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। সর্বোপরি সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করব। তারপর প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেব। এগুলো আমরা প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেছি। আজকে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বৈঠক। অনানুষ্ঠানিকভাবে আরও দুটি বৈঠক করেছি। আমাদের বারবার করে স্মরণ করে দেওয়া হচ্ছে এই কমিশনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে দাবি করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই কমিশনের কাজের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী নির্বাচনি রোডম্যাপ তৈরি এবং নির্বাচনি দিনক্ষণ নির্ধারণ করা। এটা আমাদের জন্য পবিত্র দায়িত্ব। সমতল মাঠ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমরা সবকিছুর মৌলিক পরিবর্তনের কথা বলেছি। আইন-কানুন বিধি-বিধান সবকিছু পর্যালোচনা করব, বিবেচনা করব। যাতে সহায়তা হয় সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য।