শহিদ ১০৫ শিশুর পরিবারকে সম্মাননা, স্মৃতিচারণ করে কান্না স্বজনদের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৪ এএম
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ ১০৫ শিশুর পরিবারকে সম্মাননা ও অনুদান দিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আরও দেওয়া হয়েছে শহিদি স্বীকৃতির মানপত্র।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শহিদ শিশু পরিবারের সদস্যরা সন্তানের নানা স্মৃতি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তান হারানোর ব্যথা ও শোক কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তারা বলেন, এই শোক কীভাবে ভুলে যাব? প্রতিদিন সন্তানের ছবি ও ব্যবহার্য জিনিস নিয়ে কান্না করি।
এ সময় জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান শহিদ পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, আন্দোলনে গুলি ও হত্যার ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার চাই। আন্দোলনে শহিদ শিশুদের বীর শহিদদের মর্যাদা দেওয়া, তাদের নামে নানা স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে সুযোগ দিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সঙ্গে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মিল রয়েছে। একাত্তর সালে মা তার সন্তানদের যুদ্ধে পাঠিয়েছে চব্বিশের অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের আন্দোলনে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, এখন আমাদের পাতা উলটে ফেলার সময় হয়েছে। গত ৫০ বছরে আমরা যত ভুল, চুরি, ডাকাতি করে দেশটাকে নিঃস্ব করেছি, অর্থ পাচার করে একটা নিঃস্ব দেশ ফেলে পালিয়েছি। এ সময়টাকে ভোলা যাবে না। কারণ আমরা চাই না, পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের দিকে আঙুল তুলুক। আমরা আবার শূন্য থেকে শুরু করব। নতুন প্রজন্ম নিজেদের মতো করে ভালোবাসা, মেধা-মনন দিয়ে দেশ গড়ে তুলবে। কারণ তারা ন্যায়, অন্যায়কে গভীরভাবে ধারণ করে। আমাদের প্রজন্ম তোমাদের চোখ দিয়ে নতুন করে দেখতে শিখবে। এ প্রজন্মের হাত দিয়েই গড়ে উঠবে গণতন্ত্রের সুন্দর জায়গা।
এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আমাদের শেকড় থেকে নাড়া দিয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশটাকে নতুন করে গড়তে হবে। আমরা নিশ্চিতভাবে মুক্তির এক ধাপ এগোলাম। আমরা যারা সামাজিক আন্দোলন করি, ক্যাম্পেইন করি এর কোনো কিছু এ আন্দোলনের সমতুল্য হতে পারবে না। এই একটি মাসে আমাদের মূল্যবোধের যে জায়গাটায় নাড়া পড়েছে, সেটা হাজার কোটি টাকার সামাজিক আন্দোলন বা ক্যাম্পেইন দিয়ে সম্ভব হতো না। আমরা যতই বলি না কেন, তোমাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা কম হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে শিশুদের জন্য সুন্দর একটা দেশ গড়ে তুলি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ হওয়া শিশুদের উদ্দেশ্যে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এবারের শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি শিশুর অধিকার রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার।’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। উপস্থিত ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও। মঞ্চে মমতা ও ফাহিম নামে দুজন শিশু প্রতিনিধি বক্তৃতা করে। তারা বলেন, তাদের স্কুলগুলোতে খেলার মাঠ, গ্রন্থাগার প্রয়োজন। বেড়ে ওঠার সুন্দর পরিবেশ প্রয়োজন।