সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
আহতদের চিকিৎসার্থে বিদেশ থেকে মেডিকেল টিম আনা হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ এএম
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, যারা আহত হয়েছেন, বিশেষত যারা চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পায়ে আঘাত পেয়েছেন, অঙ্গহানি হয়েছে- তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তারদের মেডিকেল টিম এনে (চীন, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে) চিকিৎসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে চীনের অ্যাডভান্স মেডিকেল টিম বাংলাদেশে এসেছেন জানিয়ে নূরজাহান বেগম বলেন, তারা হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়া Need Based Assessment-পূর্বক পরবর্তীতে কি ধরণের সেবা/সাপোর্ট দেওয়া হবে, সে বিষয়েও তারা অবহিত করবেন।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত চক্ষু রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য সেবা ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উদ্যোগে নেপাল থেকে তিনজন (০৩) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আগারগাওয়ের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ও ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এসেছেন। এছাড়া আজ (৭ অক্টোবর) ফ্রান্সের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ঢাকায় এসেছেন।
নূরজাহান বেগম বলেন, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন ১৫ দিনের ভেতর যুক্তরাজ্য থেকে অর্থোপেডিক ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসবেন। নেপাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎকগণ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মোট ১৯২ জন চক্ষু রোগীকে চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এবং চারজন (০৪) জটিল রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেন। ইনজুরড রেটিনা রোগীদের রেটিনার অস্ত্রোপচার শেষ হলে প্রায় ছয়মাস পর কর্ণিয়া অপারেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। কর্ণিয়া সরবরাহে সেবা ফাউন্ডেশন সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, এছাড়া বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেছেন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকগণ রোগীদেরকে যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তা ছিল সঠিক। এ ধরনের রোগীদের নেপালেও একইভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। চোখের ভেতরের Pillet/গুলি যে পদ্ধতিতে অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ সঠিক।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও শহিদ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নীতিমালা প্রণয়ন এবং শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা এবং আহত-নিহতদের একটা প্রাথমিক তালিকা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছেন বলেও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, প্রস্তুতকৃত তালিকা সর্বসাধারণের যাচাইয়ের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে ডাটাবেস তৈরির সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
এ সময় নূরজাহান বেগম জানান, সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারাদেশে মোট শহিদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত (৬ অক্টোবর পর্যন্ত) ৭৩৭ জন এবং আহতের সংখ্যা ২২,৯০৭ জন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্ণার স্থাপন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় ও অন্যান্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া DNCC ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হবার আহবান জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গুর দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে প্রতিরোধ, আরেকটি চিকিৎসা। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন করতে পারি তাহলে ডেঙ্গুর প্রতিকার করা সম্ভব।
এছাড়া দেশের সব সরকারি হাসপাতালে (জেলা পর্যায় পর্যন্ত) ডেঙ্গু বিষয়ে ‘ফোকাল পারসন’ নির্ধারণ করা হয়েছে। যাদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সারা দেশের ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ডেঙ্গু টেস্ট কিট, আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) এবং অন্যান্য লজিস্টিকের স্টক এবং চাহিদা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব সরকারি হাসপাতালের স্ট্যাটিস্টিকশিয়ান ও ল্যাব টেকনিশিয়ানদেরকে ডেঙ্গু অ্যাপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা কর্তৃক ডেঙ্গু ট্র্যাকার অ্যাপলিকেশন তৈরি হয়েছে। যার মাধ্যমে ল্যাবে পরীক্ষাকৃত ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষার ফলাফল সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ. টি. এম. সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।